মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক ও দুর্নীতি প্রতিরোধে লাখো নারী পুরুষকে শপথ পাঠ করিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৃহস্পতিবার বিকেলে লালদীঘি মাঠে চসিক আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যের পর তিনি এ শপথ বাক্য পাঠ করান। এ সময় তিনি বার আউলিয়া, মাস্টারদা সূর্য সেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, এম এ মান্নান, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান কায়সার এবং এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে স্মরণ করেন।
২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচএম সোহেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমদ, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অর্থ ও প্রশাসন) আমেনা বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার। প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান ও নিছার উদ্দিন আহমদসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ। অনুভূতি প্রকাশ করেন মাদকের সর্বনাশা পথ থেকে ফিরে আসা মোহাম্মদ সেলিম। মহাসমাবেশ শুরুর আগে মাদক, জঙ্গিবাদ ও যৌতুকের বিরুদ্ধে কবিগান পরিবেশন করেন কবিয়াল কল্পতরু ভট্টাচার্য।
বেলা আড়াইটা থেকে ব্যানার, ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা বাস, ট্রাক নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। তাছাড়া মিছিল নিয়ে আসেন চসিক কলেজ শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক ফোরাম, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সম্মিলিত হকার ফেডারেশন, ফুটপাত হকার সমিতি, চট্টগ্রাম ওয়াসা শ্রমিক লীগ, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি, ক্যাব, চসিক যান্ত্রিক ও প্রকৌশল বিভাগ, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সিটি মেয়র বলেন, ‘আমরা চাই এ শহর সবার জন্য নিরাপদ থাকুক। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য বাসযোগ্য হোক। আজ আমরা শপথ বাক্য পাঠ করেছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে নতুন প্রজন্মকে সুস্থ সবল থাকতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, যৌতুক, জঙ্গিবাদ থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করেছি ৪১টি ওয়ার্ডে। আমাদের মূল লক্ষ্য- নগরবাসীকে শপথ করানো। আজ সে শপথ অনুষ্ঠিত হলো।’
তিনি বলেন, ‘নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা ধরে রাখতে কোনো অনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করা যাবে না। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিতে জড়িত হবো না। কোনো অজুহাতে মাদকের শরণাপন্ন হবো না। কোনো অবস্থাতেই যৌতুক গ্রহণ ও প্রদান করবো না- এই হোক আমাদের আজকের শপথ।’
শপথ পাঠক করাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যৌতুক, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলবো। সব অপরাধবিষয়ক সংবাদ প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে ভালোবাসবো। বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবো। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে তার যোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত দুর্নীতি ও মাদকবিরোধী চলমান জিরো টলারেন্স নীতিকে বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার এক বছরে ৬ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছে। বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। সময় এসেছে মাদক রুখে দাঁড়ানোর। মাদক সহ্য করলে, মাদক আমাদের ধ্বংস করে দেবে। মাদকসেবীর হাতে নিহত হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। যারা মাদকসেবী তারা জানোয়ারে পরিণত হয়।’ তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আশা করি চট্টগ্রামকে মাদকশূন্য করতে পারবো। চট্টগ্রাম থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে গর্জন শুনতে চাই।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ ও প্রশাসন) আমেনা বেগম বলেন, আমার বাবাকে অনেক লোক অনেক কথা শুনিয়েছেন। বাবা আমাকে বিসিএস পরীক্ষা দিতে ঢাকায় নিয়ে যেতেন। আমার মা প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পার হননি, কিন্তু তিনি চেয়েছেন মেয়ে এমএ পাস করবে। আপনারাও মেয়েদের শিক্ষিত করবেন, বাল্য বিয়ে দেবেন না। আমার মা আমার বাসায় মারা গেছেন। মেয়েরা মা-বাবার পাশে থাকেন। আপনার মেয়েকে স্বাবলম্বী করুন। কোথাও নারী নির্যাতনের খবর পেলে ৯৯৯ এ কল দেন।’
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার/রেজা মুজাম্মেল