ভোট উৎসব শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে। সকাল আটটায় একযোগে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিকাল চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে।
দেখা গেছে, শীতের সকালে অনেক ভোটার আগেই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছেন। কেউ বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে সাধারণ ভোটারের চেয়ে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে দলীয় নেতা কর্মীদের বেশি দেখা যাচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উত্তেজনা বিরাজ করছে বন্দর নগরীতে। সব কেন্দ্রে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে।
নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১৮ হাজার সদস্য। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সংঘাত-সহিংসতার কারণে ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভোটার ও অনেক প্রার্থীই। এ নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীসহ মেয়র পদে ৭জন ও সংরক্ষিত ৫৭ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭২ জন প্রার্থী। ভোটার রয়েছেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬জন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র পাশাপাশি দেশবাসীর নজর এখন চট্টগ্রাম সিটি ভোটে। সবার প্রত্যাশা সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের। এ সিটিতে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নিরপেক্ষ ভোট হলে জয়ের আশা দেখছে বিএনপি।নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় প্রতীকে প্রথম এ নির্বাচনে লড়াই হবে নৌকা-ধানের শীষের। ভালো ভোটের আশা করছে নির্বাচন কমিশন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায়ের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। কেননা চট্টগ্রাম সিটির মতো হাইপ্রোফাইলের নির্বাচন এই কমিশনের আমলে আর নেই।
নির্বাচন কমিশন বলছে, করোনাকালে সব স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের আয়োজন হচ্ছে, সুরক্ষার সব ব্যবস্থাই কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটিতে কোনো সাধারণ ছুটি থাকছে না। এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচনে ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে নগরী। ভোট নিয়ে কোন শঙ্কা নেই।
ইসি জানিয়েছে, এবার নগরীর ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হবে। এবার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। ভোট গ্রহণে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ৭৩৫ জন, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ১৪৭০ জন, পোলিং ও কর্মকর্তা ২৯৪০ জন। নিরাপত্তার দায়িত্বে মোট ১৮ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে র্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। মোতায়েন থাকবে ২৫ প্লাটুন বিজিবি।
মেয়র প্রার্থীরা:
চসিকের নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ৭ জন নির্বাচন করছেন। এদের মধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মো. রেজাউলি করিম চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন (ধানের শীষ)। অন্যদিকে ছোট চারটি দলের মধ্যে প্রার্থী রয়েছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ (চেয়ার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন (মোমবাতি) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আবুল মনজুর (আম)। অন্যজন হচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী (হাতি)। এবার নগরীর ১৪টি সংরক্ষিত এবং ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ছোট দলগুলোর কোন কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। চসিকের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীসহ ২’শ ৩৬ জন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। ১৮ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মৃত্যুতে ৩১ নং ওয়ার্ডের ভোট স্থগিত রয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি এ ওয়ার্ডে ভোট হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল