দেশের উর্ধ্বগতির বাজারে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে পিয়াজের দাম। চট্টগ্রামে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে কেজি প্রতি ১৫-১৮ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। পিয়াজের দাম ক্রেতাদের ক্রয়-ক্ষমতার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচড়া বিক্রেতারাও বেচাকেনা করে খুশি রয়েছেন। তবে রমজানের আগেই আবার কোনো দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সেই ‘টেনশনে’ রয়েছেন ক্রেতারা। তাছাড়া পিয়াজ ভারত-মিয়ানমার থেকে আমদানির ফলে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে কোনো ধরণের প্রভাবও নেই বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ বেশি হওয়ায় পাইকারিতে কমছে পিয়াজের দাম। তার প্রভাব ধীরে ধীরে পড়ছে খুচরায়। মূলত সারা বছর ভারত থেকে সড়ক পথেই সিংহভাগ পিয়াজ আমদানি হয় দেশে। মৌসুমের শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পিয়াজ আসে। সংকটের সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সমুদ্রপথে আসা বাহারি সব পিয়াজের দেখা মেলে। এখন বাংলাদেশের মেহেরপুরি পিয়াজের সরবরাহ ও বিক্রি বেশি আড়তে। তবে পচনশীল কাঁচাপণ্য হওয়ায় পিয়াজ বেশিদিন রাখা যায় না আড়ত বা গুদামে। তাই সরবরাহের ওপরই দাম নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে, সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে।
দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেও পাইকারিতে সহনীয় পর্যায়ে দাম রয়েছে। ফলে খুচড়া বাজারে দামও কম পিয়াজের। চট্টগ্রামের মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজির দেউরি, ২ নং গেইটসহ বিভিন্ন খুচড়া বাজারে মানভেদে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পিয়াজ বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকারক থেকে ট্রাক বোঝাই করে খাতুনগঞ্জের আড়তে পিয়াজ নিয়ে আসেন বেপারিরা। প্রতিদিন অর্ধ শতাধিক পিয়াজের ট্রাক ঢুকছে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলীসহ জেলার বিভিন্ন আড়তে।
বৈশাল নামের একজন ক্রেতা বলেন, দুই সপ্তাহের আগের তুলনায় পিয়াজের দাম অনেক কমেছে। কেজিপ্রতি মানভেদে ১২ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। আগে কেজিপ্রতি মানভেদে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত পিয়াজ কিনেছি। এখন কিনছি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এই দাম বর্তমানে সহনীয় বা স্বাভাবিক দামেই রয়েছে কিছুটা। তবে আতংক রমজানকে ঘিরে আবারও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে।
খাতুনগঞ্জের পিয়াজ ব্যবসায়ী মেসার্স ইরা ট্রের্ডাসের স্বত্তাধীকারী মো. ফারুক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভারতের নাসিক ও কানপুরি পিয়াজ আড়তে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২৫-২৮ টাকা। মিয়ানমারের পিয়াজ ২৫-২৮ টাকা। দেশি মেহেরপুরি পিয়াজ ১৮-২০ টাকা।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ ভারত ও মিয়ানমারের বেশি ঝাঁজের পিয়াজই বেশি পছন্দ করেন। আমদানি, সরবরাহ, সড়কপথ স্বাভাবিক থাকলে এবার রমজানে পিয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে পাইকারি বাজারে দাম সামান্য বাড়লেও খুচরা বাজারে পিয়াজ বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফা করছে। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে দেশের মধ্যে পিয়াজের কোন ধরণের প্রভাব নেই বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলীর কিছু চাউলের আড়তেও পিয়াজের গোডাউন করা হয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদার উপর নির্ভর করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব গোডাউন থেকে পিয়াজ দ্রুত সরবরাহ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, রমজান সামনে এলেই প্রতিবছরের মতো পিয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলে। অস্থির হয়ে উঠে বাজার দর। ব্যবসায়ীদের একটি চক্র এই বাজার উত্থান-পতনের চেষ্টা করে থাকেন প্রতিনিয়তই। করোনাকালীন সময়ে এমনিতেই সাধারণ মানুষ কষ্টে ছিল এখনও রয়েছে। বর্তমানে পিয়াজের দাম কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছে। খুচরা বাজারেও দাম কম। এ পরিস্থিতিতে সরকার আন্তরিক এবং কঠোর মনিটরিং করলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল