চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এ কাজে খালে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। পানি যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে পরিদর্শনে গিয়ে খালে একটি ঢিল ছুঁড়ে মারলাম। এক ঢিলেই কয়েক হাজার মশা বেরিয়ে আসল। স্প্রে করেও কাজ হয় না। রাত-দিনে সমানে মশা। এটা অস্বীকার করছি না। তাই জলাবদ্ধতা প্রকল্প শেষ না হলে মশা নির্মূল সম্ভব হবে না। মশা নিয়ে আমরাও বিব্রত ও বিড়ম্বনায় আছি।
বুধবার দুপুরে নগরের আন্দরকিল্লার কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে চসিক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালামসহ চসিকের বিভাগীয় প্রধানগণ।
চসিক মেয়র বলেন, খাল-নালা অবৈধ দখলে থাকলে তা উচ্ছেদ করা হবে। দখলকারীরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। কিছুদিন আগে একজন প্রভাবশালীর অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ নিয়ে অনেক তদবির আসছে। কিন্তু কারো কথা শুনিনি।
মেয়র বলেন, মশা নিয়ে কাজ করতে চসিকে অস্থায়ীভাবে একজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। কিন্তু এটা খুবই দুরূহ হয়ে গেছে। কারণ জমে থাকা পানিতে কোটি কোটি মশা উৎপন্ন হচ্ছে। অথচ শহরের বাইরে গ্রামে দেখা যাবে এখানকার মতো এত মশা সেখানে নেই। কারণ সেখানে পানি জমে থাকার সুযোগ কম। এখানে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ তো আছেই, এরপর ওয়াসাও রাস্তাঘাটে গর্ত করে রেখে দেয়, সেখানে পানি জমে। আর পানি জমলেই মশা। এই মশা নিয়ে আমি খুবই বিড়ম্বনায় আছি।’
মেয়র বলেন, খালের বাঁধ তুলে না নিলে সামনের বর্ষায় জলাবদ্ধতা আরও ‘ভয়াবহ’ হবে। গত বছর গলা পরিমাণ পানি জমছিল, এবার মাথার ওপর পর্যন্ত জমবে। এপ্রিলের শেষে যদি বাঁধ খুলে দেয়া না হয়, তাহলে আমি জীবন দিয়েও মানুষকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারব না। বিষয়টা মন্ত্রণালয়ে বলেছি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ আমি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। কয়েকদিন আগেও সমন্বয় সভা করেছি। সব সংস্থা একসঙ্গে বসেছিলাম।
তিনি বলেন, গত বর্ষায় বেস্টনিবিহীন খাল-নালায় পড়ে চারজনের মৃত্যু হয়। তাই প্রাণহানি ঠেকাতে, সড়কের পাশে মানুষের চলাচল আছে, এমন এলাকায় উন্মুক্ত খাল-নালার পাড়ে আমরা কোথাও গ্রিল দিয়ে, কোথাও দেওয়াল তুলে দিচ্ছি। কিন্তু নগরীতে সিডিএসহ বিভিন্ন সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে। ডিপিপিতে লেখা আছে, যেসব এলাকায় উন্নয়ন কাজ হচ্ছে সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার। সুতরাং সেখানে চসিক যাবার সুযোগ নেই।
আবর্জনা অপসারণ নিয়ে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরকে ছয়টি জোনে ভাগ করে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হচ্ছে। সকালে ময়লা নেয়ার পর আবার দেখা যায়, দিনের ১০টা-১১টার দিকেও আবারও ময়লা ফেলা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষেরও অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। একটা খাল বা নালা পরিষ্কার করা হয়, কিন্তু ১৫ দিন পর দেখা যায় সেখানে আবার ময়লা-আবর্জনা, শুধু পলিথিন আর পলিথিন। এই পলিথিন বন্ধে আমি অভিযান শুরু করেছিলাম। ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছিল। সময় দিয়েছি। আমি বলে দিয়েছি, সময়সীমা শেষ হলে আমি কঠোর হব।
তিনি বলেন, অতীতে সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি করে অনেকে চসিকের কাছ থেকে জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে, গাছ তিনটা লাগিয়েছে, এরপর দোকান বানিয়ে ভাড়া দিয়েছে। আমি জরিপ করেছি। এ ধরনের অনেক চুক্তি আমি বাতিল করেছি। সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অনেকগুলো আর নবায়ন করা হয়নি। যেগুলো আছে সেগুলোর সময় বাড়ানো হবে না।
ফুটপাতের ওপর দোকান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আমি ফুটপাতে একটি দোকানও বরাদ্দ দিই নাই। আমি যেখানে ফুটপাতের ওপর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করছি, সেখানে আমি দোকান কেন বরাদ্দ দেব? আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা দিয়েছেন। চুক্তিগুলো এমনভাবে করেছেন, এখন চাইলেও আমি বাতিল করতে পারছি না।
সড়ক বাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়কে লাগানো এলইডি বাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। চোর ধরা হয়েছে, পুরো গ্যাংসহ ধরা হয়েছে। তবুও চুরি হচ্ছে। ফ্লাইওভারের পিলারে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এলইডি বাতি লাগিয়েছি। এক সপ্তাহও রাখতে পারছি না। চোর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর