চট্টগ্রামে প্রতি বছরই বাড়ছে সরিষা আবাদ। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে বিগত বছরের চেয়ে বেশি হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ। ২০২৩ সালে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে ২ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে। ২০২৪ সালে তা দ্বিগুণ বেড়ে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২ হাজার ২৪৮ হেক্টর জমি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা আবাদে জোর দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া সরিষা চাষে খরচ কম। লাভজনক হওয়ায় এই ফলন চাষাবাদের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, ২০২৪ সালে মীরসরাইয়ে ৭২০ হেক্টর, সীতাকুণ্ডে ৩১৭ হেক্টর, ফটিকছড়িতে ৩৯৭ হেক্টর, হাটহাজারীতে ৪৬০ হেক্টর, রাউজানে ৮৬৪ হেক্টর, রাঙ্গুনিয়ায় ৩৬৪ হেক্টর, বোয়ালখালীতে ১৬১ হেক্টর, পটিয়ায় ১৫০ হেক্টর, কর্ণফুলীতে ২১ হেক্টর, চন্দনাইশে ১৯২ হেক্টর, আনোয়ারায় ২১০ হেক্টর, লোহাগাড়ায় ২১২ হেক্টর, সাতকানিয়ায় ২৯৮ হেক্টর, বাঁশখালীতে ১০৯ হেক্টর ও স›দ্বীপে ১১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে রাউজান উপজেলায়।
সরেজমিনে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর, চাতরী, রায়পুর, গহিরা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষা গাছে ফুল আসায় মাঠগুলোতে এখন হলুদ রঙের নান্দনিকতা ছড়াচ্ছে। প্রকৃতির কোনও কন্যা যেন সেজেছে হলুদ বরণ বেশে। বাড়তি লাভ হওয়ায় আমন ধান উত্তোলনের পরে জমি ফেলে না রেখে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকেরা। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যাবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি সরিষা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকছে।
স্বল্প সময়ে ভালো ফলন ও লাভবান হওয়ার কারণে সরিষা চাষ করা হচ্ছে বলে জানান কৃষকরা। আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া, চাতরী, হাইলধর, রায়পুর ইউনিয়নে এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ১৭০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এখানে মূলত বারি-১৮ জাতের সরিষা চাষ হয়েছে বেশি। এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল এবং খরচও হয়। প্রতি শতক জমিতে ৬ কেজি সরিষা উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। প্রতি কানি (৪০শতক) জমিতে খরচ বাদে ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ থাকবে বলে আশা কৃষকদের।
চট্টগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ বাড়াচ্ছেন। বেশ কয়েক জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮ ও বিনা-৯ জাতের আবাদ বেশি হয়েছে। হেক্টর প্রতি এক দশমিক দুই টন ফলন পাওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বারির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সহিদুল ইসলাম খান বলেন, গত এক বছরে তা দ্বিগুণ হয়েছে। চট্টগ্রামে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আমন ধান কাটা সম্পন্ন হয়ে যায়। এরপর অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। দেখা যায়, পতিত কিছু জমিতে ফেলন চাষ হয়। বাকিগুলো পতিত থেকে যায়। ওসব জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এবার বারি-১৪ ও বারি-১৮-এর বীজ হাটহাজারী এবং স›দ্বীপ উপজেলার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এসব সরিষায় হেক্টর প্রতি দেড় থেকে দুই টন ফলন হয়। তেল উৎপাদনের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখছে এগুলো। এ কারণে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ