বিতর্কিত ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিমেল কদরকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। এর আগে তিনি সমালোচনার মুখে স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-১) স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) তাকে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় বদলির নির্দেশ জারি করা হয়।
২০১৯ সালে ঘুষ ও দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ওই শিক্ষা কর্মকর্তাকে পুনরায় ফটিকছড়িতে দায়িত্ব দেওয়ায় স্থানীয় শিক্ষক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। শিক্ষকরা প্রকাশ্যে তার উপস্থিতিতে অফিস কার্যক্রম বর্জনের হুঁশিয়ারি দেন, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ২৬ অক্টোবর বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আজিমেল কদর বলেন, শিক্ষকরাই আমার কাজের অংশীদার। তারা যদি না চান, তাহলে আমি এখানে থাকব না। আজই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি জানান, আমার চাকরির শেষ সময়ে চেয়েছিলাম এখানেই থাকতে। কিন্তু যাদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, তারা যদি আমাকে না চান, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছি।
আজিমেল কদরের স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এবং বদলির সরকারি আদেশে শিক্ষক সমাজে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ফটিকছড়ি উপজেলা শিক্ষক নেত্রী রহিমা বেগম বলেন, আমরা কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু শিক্ষা অফিসকে আস্থার জায়গা রাখতে হলে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দায়িত্বে না রাখাই ভালো। তার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে শিক্ষক সমাজে স্বস্তি ফিরেছে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যেহেতু শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করেই তার কাজ করতে হয়, তাই তোপের মুখে থেকে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তার অন্যত্র বদলি যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ফটিকছড়ির বেড়াজালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা আক্তারের কাছ থেকে বদলির বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণের সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে হাতেনাতে গ্রেপ্তার হন আজিমেল কদর। তদন্ত শেষে দুদক তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বিচার শেষে ২০২৫ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত তাকে ২ বছর ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তাকে পুনরায় ফটিকছড়িতে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে সমালোচনার ঝড় ওঠ। পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে ফটিকছড়ি থেকে সরিয়ে খালিয়াজুরীতে বদলি করে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল