নিজেদের বিভাগ বা স্টাফদের রক্ষা করতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে রেলের পৃথক দুটি তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এতে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭ দিনেও জমা দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা। এই ধীরগতির কারণে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে ‘কৌশলী’ রক্ষার একটা অপ্রচেষ্টা চলছে বলে জানান রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতারাও নিজেদের সমর্থিত কর্মীদের রক্ষায় জড়িত নেই বলে ছাফাই দিয়ে ‘কৌশলে’ তদবির সুপারিশ করছেন তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছেও।
তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানান উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মনজুরুল আলম। এ ঘটনায় দোষী হিসেবে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করা হবে।
চট্টগ্রামে ট্রেন দুর্ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে ফৌজদারহাট স্টেশন মাস্টার সঞ্জিব দাশ ও ট্রেন কন্ট্রোলার শহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে। দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানে বা প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য পেলেও তদন্তের স্বার্থে এসব বিষয়ে বা অভ্যন্তরীণ কৌশলে কোন ধরণের মুখ খুলছেন না দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এছাড়া পাহাড়তলীর দুর্ঘটনার জন্য মহানগর গোধূলি ট্রেনের চালক কাজী নাছির উদ্দিনসহ প্রকৌশল বিভাগের দায়িত্ব অবহেলারও অভিযোগ উঠে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার ফৌজদারহাট ও পাহাড়তলীতে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিটিতে দায়িত্বে আছেন পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) ফিরোজ ইফতেখার ও চীফ পর্যায়ে দায়িত্বে আছেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মিয়া জাহান।
পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তিনদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করার কথা ছিল। এখনও পর্যন্ত এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। হয়তো বিস্তারিত বিষয়গুলো তদন্তে তুলে আনতে দেরি হচ্ছে। তবে সময় বেঁধে দেয়া হলেও দ্রুত জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে পৃথক তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রতিবেদন নিয়ে কোন ধরণের কোন্দল বা দ্বন্দ্ব আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) ফিরোজ ইফতেখার বলেন, সঠিক তথ্য তুলে আনতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন আছে। তদন্ত কাজও চলছে দ্রুত। এটাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করব। তিনি দাবি করেন, তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন ধরণের দ্বন্দ্ব নেই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের জন্য কিছুটা সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১১টায় সিজিপিওয়াই ইয়ার্ড থেকে কন্টেইনারবাহী ট্রেনটি ছেড়ে আসে। ট্রেনটি ফৌজদারহাট এলাকা পৌঁছলে প্রসিড হওয়ার নির্দেশনা দেয় স্টেশন মাস্টার সঞ্জিব দাশ। এরই মধ্যে ওই ট্রেনকে অপেক্ষায় রেখে যাত্রীবাহী ঈদ স্পেশাল ট্রেনকে লাইন ক্লিয়ার দেওয়ার নির্দেশনা দেন ট্রেন কন্ট্রোলার শহিদুল আনোয়ার। এরপর কন্টেইনারবাহী ট্রেনকে থামাতে এফএইচটি স্যুইচ চাপ দিলে সিগন্যাল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এতে ইঞ্জিনটি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কনটেইনারবাহী ট্রেন লাইন ক্লিয়ার দেওয়ার আগে কন্ট্রোলারের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল স্টেশন মাস্টার সঞ্জীব দাশের। একইভাবে কোন ট্রেনকে আগে ক্লিয়ার দেবে সে বিষয়টি আগেই জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল ট্রেন কন্ট্রোলার শহিদুল আনোয়ারের। এক্ষেত্রে দুজনেরই গাফিলতি রয়েছে। এতে প্রধান স্টেশন মাস্টার শাহ আলম দায়িত্বে থাকলে হয়তো এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না। একই সঙ্গে ফৌজদারহাটে দুর্ঘটনার কারণে আপ মেইন লাইন ব্লক হয়ে যায়। ফলে উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডাউন লাইনে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, তিনটি ক্রসওভার ও টেলিং পয়েন্টে লক না থাকার কারণে পাহাড়তলীতে দুর্ঘটনা ঘটেছে। মেইন লাইনে এসে লুপ লাইনে নিয়ে যায়। পাহাড়তলীতে লুপ লাইনে না গেলে ক্রসওভার পার হতে হতো দুটি। দুটি ক্রসওভার পার হয়ে তৃতীয় ক্রসওভার পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে।
বিডি-প্রতিদিন/২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/মাহবুব