বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিতে। কিন্তু যেহেতু এ বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই নির্বাচনের আগে অর্থাৎ চলতি বছরের ডিসেম্বরের আগে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি আমরা। আশা করি এ সময়ের মধ্যে দেশের সেসব নাগরিক বিদ্যুতের সুবিধা পাননি, তাদের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে যাবে। এর ফলে নির্বাচনের আগে আমাদের সংসদ সদস্যরা এ কথা বলতে পারবেন, বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি।
স্পিকার ড. শিরীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আজকের প্রশ্নোত্তর পর্বে মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২)সহ পাঁচজন সংসদ সদস্যের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কথা বলেন।
সরকারদলীয় দলীয় সদস্য নবী নেওয়াজের (ঝিনাইদহ-৩ ) এক সম্পূরক প্রশ্নে প্রতিদিনই মাগরিবের নামাজের সময় বিদ্যুৎ থাকে না কেন-এর কারণ জানতে চান।
এর জবাবে প্রতিমন্ত্রী ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে লোড শেডিং হচ্ছে স্বীকার করে বলেন, পিকআওয়ারে ঢাকার বাইরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আগামী এক থেকে তিন বছরের মধ্য সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতে যেতে পারবো।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, সমস্যাটা হচ্ছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে, কারণ সন্ধ্যার থেকে শুরু হয় পিকআওয়ার। উনার এলাকায় যে ঘটনা হচ্ছে বুঝা যাচ্ছে অফপিক আওয়ারের সময় যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, পিকে তার বিদ্যুৎ চাহিদা কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে। এসময় তিনি জানান, আমাদের সিস্টেম যেটা আছে অর্থাৎ সাবস্টেশন এবং গ্রিড-তা পুরাতন। আমরা যদি বিদ্যুৎ দেইও তা নিতে পারছে না, অটোমেটিক্যালি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার মানে তার গ্রিডে সমস্যা আছে। এজন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যেতে আমাদের আরও সময় লাগবে। সারাদেশে গ্রিডের কাজ চলছে, নতুন লাইনের কাজ চলছে, সাব স্টেশনের কাজ চলছে, ট্রান্সফরমারের কাজ চলছে।
এসময় তিনি আরো জানান, গত ৪০ বছরে পরিবর্তন করা হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। আরইবিতে ৯ লাখ ট্রান্সফরমার রয়েছে। আমরা সমস্ত পুরনো ট্রান্সফরমার, ওভার লোডের ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করতে যাচ্ছি। এসব সংস্কার শেষে তিন বছরের মধ্য নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ দিতে পারবো।
আগামী বছর আরও ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ
মো. ফরিদুল হক খানের (জামালপুর-২ আসন) এক প্রশ্নর জবাবে তিনি জানান, চলতি বছরে ৩ হাজার এবং আগামী বছর আরও ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।
সিরাজুল ইসলাম মোল্লার (নরসিংদী-৩ আসন) এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযুগী ও বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ফলে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮৮টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার হাজার ৪৬ মেহাওয়াট হয়েছে। বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমান সরকার ৫ বছরে ৪৩ হাজার কিলোমিটির বিদ্যুৎ লাইন নির্মান করে ৪৪ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রধান করেছে। মহিলা আসন-৫ এর সাংসদ আখতার জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক ২ কোটি ৮০ লাখ।
চলতি বছর বাসাবাড়িতে পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগের পরিকল্পনা নেই :
জাতীয় পার্টির সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরীর তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের স্বল্পতা থাকায় চলতি বছর বাসা বাড়িতে পাইপ লাইনে গ্যাস সংযোগ প্রদানের আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই। বর্তমানে গ্যাসের সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় এবং বিকল্প জ্বালানি সহজলভ্য হওয়ায় গৃহস্থালিতে নতুন করে সংযোগ প্রদান বন্ধ রাখা হয়েছে। আবাসিক খাতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহের পরিবর্তে লিক্যুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন