গত ৩০ জুলাই ভোট গ্রহনের পর প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখন পর্যন্ত বরিশাল সিটি নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল জানতে পারছেন না ভোটাররা। কে হচ্ছেন সংশ্লিস্ট ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর, আর কে হচ্ছেন সিটি মেয়র- এ নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই নগরবাসীর। কিন্তু এতদিন এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তরও দিতে পারছিলেন না সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তবে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের এক চিঠিতে সেই ধোয়াশা অনেকটাই কেটেছে।
পুনরায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৯টি কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশন ৮টি কেন্দ্রের ফল বাতিল করে পুনরায় ওইসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অপরদিকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক ভোট স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে পুনরায়। নির্বাচন কমিশন ওইসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও দিনক্ষন চূড়ান্ত হয়নি এখনও। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজবুর রহমান জানিয়েছেন, বরিশাল সিটির ৯ কেন্দ্রে আগামী ১৩ অক্টোবর পুনরায় ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন ১৭টি কেন্দ্রের অনিয়ম তদন্ত করলেও শুধুমাত্র ৯টি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিষয়টি প্রহসন হিসেবে দেখছেন বিরোধী কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
গত ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন নজীরবিহীন ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে সকাল ১১টার মধ্যে একমাত্র সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী ছাড়া অপর ৫ প্রতিদ্বন্দ্বী একযোগে নির্বাচন বর্জন করে পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন। শুধু মেয়র পদে নয়, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা কেন্দ্রে অনিয়ম পাওয়ায় তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন ওইদিন সন্ধ্যায় ১৫টি কেন্দ্রের ফল ঘোষনা স্থগিত করেন।
এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে ওইদিন সকাল ১১টার মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। এদিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অর্ধ শতাধিক কেন্দ্রে ভোটে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ আসে। নির্বাচনের দিন গভীর রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ঘোষণা করেন। এছাড়া কয়েকটি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের বেসরকারীভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। কিন্তু মেয়র এবং কয়েকটি সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা না করায় জনমনে সংশয়-সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে দুই দফায় ওইসব অভিযোগ তদন্ত করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। দুই দফা তদন্ত হলেও দ্বিতীয় দফা কমিশনের অনুমতি ছাড়া তদন্ত হওয়ায় সেগুলো আমলে নেয়নি নির্বাচন কমিশন। এ কারণে প্রথম দফা তদন্তে ৮টি কেন্দ্রে ভোটে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় ওইসব কেন্দ্রের ফল বাতিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন পুনরায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়।
এই কেন্দ্রগুলো হলো ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আলেকান্দা ফারিয়া কমিউনিটি সেন্টার (পুরুষ), ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আগুরপুর রোডের সরকারী মহিলা কলেজ (মহিলা) ও সদর রোডের সিটি কলেজ (পুরুষ), ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিএন্ডবি রোডের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (পুরুষ) ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (মহিলা), ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌমাথা আরএম সাগরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপতলী হাউজিং শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (পুরুষ) এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রূপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এছাড়া ভোটের দিন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কর্তৃক স্থগিতকৃত ১ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দা মজিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও অপর ৮ কেন্দ্রের সাথে একই দিন পুনরায় ভোট গ্রহণের কথা জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান।
এছাড়া ওই চিঠিতে ৮টি কেন্দ্রের ভোটের ফল বাতিল এবং একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহন বন্ধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র, সংরক্ষিত ও সাধারণ কাউন্সিলর পদ সমূহের মধ্যে যেসব পদে ফল নির্ধারিত হবে সেগুলো বিধি অনুযায়ী প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। যেসব পদে ফল নির্ধারিত হবে না সেসব পদে সংশ্লিস্ট ভোট কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
পুনরায় ভোট গ্রহনের তারিখ সহ বিস্তারিত নির্দেশনা দ্রুত সময়ের মধ্যে জানানো হবে বলে নির্বাচন কমিশনের ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/২ অক্টোবর ২০১৮/হিমেল