সংবর্ধনায় বেশ আবেগ মথিত হয়ে উঠলো কণ্ঠস্বর। এক পর্যায়ে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। কাঁদলেন অঝোরে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও সাবেক পৌর মেয়র ইকরামুল হক টিটুর চোখে জল। এই জলে বরণ লগ্নে হাজারো মানুষের মনটাও যেনো ভারী হয়ে উঠলো। নগরীর টাউন হলের গোটা মাঠটিতে নেমে এলা পিনপতন নীরবতা। তবে এ কাঁদা আনন্দের। এ কাঁদা বড় কিছু পাবার।
শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইকরামুল হক টিটুকে ময়মনসিংহের প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য নৌকা তুলে দেন। এরপর শনিবার ঢাকা থেকে ফেরার সময় পথে পথে সংবর্ধনা নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় উপস্থিত হন নগরীর টাউন হল ময়দানে।
পরে রাত আটটার দিকে যখন তিনি মাইকের সামনে যান কিছু বলার জন্য সেখানে নিজের আবেগকে আর সংবরণ করতে পারেননি তরুণ এই জননেতা। ক্ষণে ক্ষণে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখলো উপস্থিত হাজারো মানুষ।
নিজের প্রায় সাড়ে ১০ মিনিটের বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বললেন, ‘এই এপ্রিল মাস আমার জন্য অনেক কষ্টের মাস। এ মাসেই আমার মা’কে হারিয়েছি। বাবাকেও হারিয়েছি এ মাসেই। আর এ মাসেই জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার হাতে নৌকা তুলে দিয়েছেন।’
মানুষে ঠাসা এই সংবর্ধনায় কাঁদতে কাঁদতে ইকরামুল হক টিটু আরো বলেন, ‘আমি যার জন্য এই ময়মনসিংহ নগরীকে মডেল নগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবারো কৃতজ্ঞতা জানাই জননেত্রীকে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারা বঙ্গবন্ধুর জন্য দোয়া করবেন, মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করবেন।’
নিজেকে এতিম উল্লেখ কান্না জড়িত কণ্ঠে টিটু বলেন, ‘এর পূর্বে আমি কখনো ভাবিনি আপনারা আমাকে এত ভালবাসেন। গত কয়েকদিনে আপনাদের যে পরিমাণ সহযোগীতা পেয়েছি, দোয়া ও আশীর্বাদ করেছেন তার জন্য আমি চির ঋণী। সামনের দিনগুলোতেও আমাকে সন্তানের মতো আগলে রাখবেন বলে বিশ্বাস করি।
সবশেষ তিনি উপস্থিত জনতার কাছে ভোট চেয়ে বলেন, আমি আমার কর্মকালীন সময়ে আপনাদের সেবা করার জন্য সর্বোচ্চটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই ময়মনসিংহ পৌরসভার আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন কী অবস্থায় ছিল আর এখন কী অবস্থায় আছে তা নিশ্চই আপনারা উপলব্ধি করছেন। আপনারা যদি আবারো আমাকে ভোট দিয়ে এই সিটির মেয়র নির্বাচিত করেন, আমি কথা দিচ্ছি, সর্বাত্মক চেষ্টা করবো এই ময়মনসিংহকে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী মডেল নগরী গড়ে তোলার জন্য।
সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এর আগে প্রশাসক ইকরামুল হক টিটু শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রসঙ্গত, আগামী ৫ মে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনের তারিখ উল্লেখ করে গত মাসে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মেয়র ও কাউন্সিলর পদে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নত্র জমার শেষ সময় ৮ এপ্রিল, মনোনয়নপত্র বাছাই ১০ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ এপ্রিল। নতুন এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ১৩০টি কেন্দ্রের সবগুলোতেই ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন