১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদাররা রংপুর টাউন হলকে বানিয়েছিল টর্চার ক্যাম্প। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর টাউন হলের নির্যাতনের স্থানটিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টাউন হলের পেছনে যে স্থানে ইন্দারা ও বরই গাছ ছিল সেখানেই নির্মিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ।
কিন্তু এর পেছনে তৎকালীন উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রে (বর্তমানে চিড়িয়াখানা) আম বাগানে অসংখ্য লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেই স্থানটি স্মৃতিস্তম্ভের আওতায় না আসায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ অপূর্ণ থেকে যাবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, ১৯৭১ সালের পুরো ৯ মাস মুক্তিকামী নিরপরাধ বাঙালিদের ধরে এনে টাউন হলে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বাঙালি রমনীদের ধরে এনে আটকে রেখে দিনের পর দিন তাদের ধর্ষণ করা হতো। পরে একসময় তাদের হত্যা করা হতো। অসহায় নারী-পুরুষের আত্ম-চিৎকারে ভারী হয়ে উঠতো টাউন হল চত্বর।
টাউন হলসংলগ্ন উত্তর পাশে ছিল একটি বড় পাকা ইন্দারা। ঠিক ইন্দারার পাশেই ছিল বিশাল এক বরই গাছ। প্রতিদিন সেই গাছের ডালে ঝুলিয়ে নিরপরাধ মানুষগুলোকে উলঙ্গ অবস্থায় নির্যাতন করা হতো। নির্মম নির্যাতনের পর একসময় তাদের হত্যা করে বরই গাছের নিচে ইন্দারায় অথবা পাশের তৎকালীন উদ্ভিদ উদ্যান কেন্দ্রে আম বাগানে মাটি চাঁপা দিয়ে রেখে দিত। স্বাধীনতার পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর অনেকেই আম বাগানে অসংখ্য গলিত এবং অর্ধগলিত লাশ দেখেছে। এর মধ্যে নারীর লাশও ছিল।
টাউন হলের পেছনে বেশ কয়েকটি সাহিত্য সংস্কৃতি সংগঠন ছিল। সম্প্রতি ওই সংগঠনগুলোকে তুলে দিয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করছে। এতে রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ খুশি হলেও আম বাগানটি স্মৃতিস্তম্ভের আওতায় না আসায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার বিষয়টি অনেকটা অর্পূণ থেকে গেল।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন থেকে টাউন হলে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
সংস্কৃতি কর্মী রেজাউল করিম জীবন বলেন, দীর্ঘদিন পরেও হলেও টাউন হলের পাশে স্মৃতিসৌধ হচ্ছে এটা ভালো কথা। কিন্তু বর্তমান চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে যেখানে আম বাগান রয়েছে, সেই স্থানটিও স্মৃতিসৌধের আওতায় আনা হলে ভালো হতো।
প্রত্যক্ষদর্শী তৎকালীন রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রুবেল বলেন, স্বাধীনতার পর দিন আম বাগানে অসংখ্য লাশ দেখেছি। সেই স্থানটিও স্মৃতিসৌধের আওতায় আনা হলে কোনো অর্পূণতা থাকতো না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই