ভুয়া মুফতি ও হাফেজ পরিচয়ে লাখ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটি ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করত। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- আবদুল মান্নান শেখ, কামরুল ওরফে কামরুজ্জামান, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আমিনুর রহমান ও শওকত আলী খান সাগর। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। তারা নামের সঙ্গে মুফতি ও হাফেজ টাইটেল ব্যবহার করত। তারা বিভিন্ন শ্রেণির সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের কাছে এ পরিচয়ে প্রতারণা করত। নিজেকে মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন পরিচয়ে বলত, আমার স্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। বিল বকেয়া থাকায় হাসপাতাল থেকে লাশ নিতে পারছি না।
এভাবে মোটা অঙ্কের টাকা সাহায্য চাইত। সম্প্রতি এভাবে সিআইডির এক নারী কর্মকর্তাকে মোবাইলে ফোন করেন মুফতি ও হাফেজ পরিচয় দেওয়া একজন। ফোনে তিনি সিআইডির নারী কর্মকর্তাকে জানান, তিনি ঢাকার একটি মসজিদের ইমাম। তার স্ত্রী হাসপাতালে মারা গেছেন। হাসপাতালের বিল বকেয়া থাকায় স্ত্রীকে দাফন করতে পারছেন না। এজন্য তার এক লাখ টাকা প্রয়োজন। রাজধানীর বিভিন্ন টার্গেট ব্যক্তির নাম, ঠিকানা ও পদবি জেনে তারপর বড় মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে ফোন করতেন। এভাবে চক্রটি জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিত।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বিষয়ে সিআইডিতে অভিযোগ করলে অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। অনুসন্ধানে নেমে রাজধানীর পল্লবী ও তুরাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা আবদুল মান্নান শেখসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। চক্রটি ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করত।
গ্রেফতার ব্যক্তিদের থেকে বিভিন্ন ক্লাব ও অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারের নাম, ঠিকানা, ব্যক্তিগত তথ্যসহ মোবাইল নম্বরসংবলিত ডিরেক্টরি জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, ঢাকা গলফ ক্লাব, চিটাগাং বোট ক্লাব, বারিধারা কসমোপলিটন ক্লাব, মহাখালী ডিওএইচএস কাউন্সিল ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন মেম্বারসহ মোট ৩৫টি ডিরেক্টরি বই জব্দ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, গ্রেফতার ব্যক্তিদের বিকাশ নম্বরের স্টেটমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রতি মাসে প্রত্যেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। ডিরেক্টরি বইতে থাকা ব্যক্তিদের টাকা দিয়েছেন, কে কখন দেবেন, কে কেমন ব্যবহার করেছেন ইত্যাদি কমেন্ট লিখে রাখতেন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ