পদ্মা নদীতে ফারাক্কা ও তিস্তায় গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের ফলে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০টির মত নদী মরতে বসেছে। এর ফলে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। জীব বৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে। তিস্তা, পদ্মাসহ অন্যান্য নদীগুলো এখন হেটে পার হওয়া যায়। আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ১৩ মার্চ। দিবসটি উপলক্ষে এবার নীলফামারীতে ঘাঘট নদের মুখ খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করবে নদী সুরক্ষা কমিটি ও রিভারাইন পিপল কমিটি।
নদী বিষয়ক গবেষক ও লেখকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা অববাহিকা অর্থাৎ রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ৫০টির বেশি নদীর প্রবাহ থেমে যেতে বসেছে গজলডোবা বাঁধের কারণে। দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার ৪০টির বেশি নদীর প্রবাহ বইছে ক্ষীণ। অর্ধ শতাব্দী আগে এসব নদীতে ছিল পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন। বর্তমানে অনেক স্থানে এসব নদীর কোন অস্তিত্বই দেখা যায় না।
এছাড়া পদ্মা অববাহিকায়ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট প্রায় ১০০টি নদী কালের অতলে হারিয়ে যেতে বসেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থাও আরও করুণ। কুড়িগ্রামের চিলমারি এলাকায় শুকনো মৌসুমে এ নদী পায়ে হেটে পার হওয়া যায়। উত্তরাঞ্চলে প্রকৃত রূপ থেকে প্রবাহ থমকে যাওয়া নদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ধরলা, জলঢাকা, দুধকুমার, তিস্তা, স্বতী, ঘাঘট, নীলকুমার, বাঙ্গালী, বড়াই, মানাস, কুমলাই, লাতারা, ধুম, বুড়িঘোড়া, দুধ কুমার, সোনাভরা, হলহলিয়া, লৌহিত্য, ঘর ঘরিয়া, ধরণী, নলেয়া, জিঞ্জিরাম, ফুলকুমার, কাটাখালী, শালমারা, রায়ঢাক, খারুভাজ, যমুনেশ্বরী, চিকলী, মরা করতোয়া, ইছামতী, আলাই কুমার ,মানাস,মরাতি, ইছামতি, পাগলা, চন্দনা, বারাহি, হাব, নবগঙ্গা, সর্বমঙ্গলা চিনারকুক,ভাঙ্গা, খলিসা, গদাই, প্রাচীন ইছামতী, কমলা ও নারদ ইত্যাদি।
সূত্র মতে, এক সময় শাখা নদী হিসেবে ওই সব নদী দাপটের সাথে এ অঞ্চলের প্রকৃতিকে শাসন করতো। এসবের অনেক স্থানে নগরায়ন হয়েছে। আবার অনেক স্থান পরিণত হয়েছে আবাদি জমি।
নদী বিষয়ক গবেষক ও রিভারাইন পিপল কমিটির পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ জানান, ফারাক্কা ও গজল ডোবা বাঁধের কারণে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২০০টির মত নদী অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে। পদ্মায় পানি না থাকায় মেঘানা নদীর পানি প্রবাহ কমে গেছে। নদী বিষয়ক লেখক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, হারিয়ে যাওয়া নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে এই অঞ্চলের মরুকরণ ঠেকানো যাবেনা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর