বরিশালের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ‘এক গুচ্ছ’ প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন বিশিষ্টজনরা। উত্তরে পদ্মা সেতু দক্ষিণে পায়রা সমুদ্র বন্দর পূর্বে ভোলার গ্যাস এবং পশ্চিমে মোংলা সমুদ্র বন্দর ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তার সুফল পেতে এই প্রস্তাবনার তুলে ধরেন তারা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা : বরিশাল অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ সভায় এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তারা।
সভায় উন্নয়ন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পুরো বিভাগে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়ন করা, ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনা-বরিশালের চরাঞ্চলে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিতে কৃষি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা, কৃষিপণ্য-শস্য প্রক্রিয়াকরন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ শিল্প প্রতিষ্ঠা, প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ, নদ-নদীর নাব্যতা ও খননে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ, কৃষি ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, চার লেন সড়ক নির্মাণ, রেললাইন স্থাপন এবং পটুয়াখালী ও বরগুনার রাখাইন উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য জাতীয় বাজেটে কার্যকর বরাদ্দ রাখার দাবি জানান বিশিষ্টজনরা।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে বাজেট প্রণয়নবিষয়ক মতবিনিময় সভায় স্থানীয় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, আইনজ্ঞ, কৃষকনেতা, মানবাধিকার সংগঠক, উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক কর্মী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক প্রতিনিধিরা আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে জাতীয় বাজেটে এসব প্রকল্প গুরুত্বের সাথ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, জাতীয় বাজেটের কাঠামো দারিদ্র্য-বৈষম্য নিরসন, প্রকৃতি-পরিচর্যা, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শিল্প-কৃষি-কর্মসংস্থান-মানবসম্পদ-মানবপুঁজি সৃষ্টি ও প্রযুক্তি বিকাশমুখী না হলে শোভন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা স্বপ্নই থেকে যাবে। ‘ভুল-ভ্রান্ত জিডিপি’ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির নামে যে ‘সুবিধার জিডিপি’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, তাতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা কোনোভাবেই লাঘব হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম সভায় বলেন, দারিদ্র্য-বৈষম্য-বঞ্চনা ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোকে যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পরেই জাতির উদ্দেশে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিকল্প বাজেট প্রস্তÍবনা তুলে ধরে। দুবৃর্ত্তায়িত আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনীতি সমিতির প্রস্তাবনাসমূহ মেনে নেওয়া কঠিন হলেও, বিন্দুমাত্র দেশপ্রেম থাকলে তা গ্রহণ না করার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও অধ্যাপক শাহ সাজেদা, অধ্যাপক মহসিন-উল ইসলাম হাবুল, জ্যোতির্ময় বিশ্বাস, ড. শামীম আহসান, পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ, ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, সাংবাদিক পুলক চ্যাটার্জী, মনিরুজ্জামান নাসিম আলী ও রাহাত খান, সাইদুর রহমান, কাজী মিজানুর রহমান, মিন্টু কুমার কর, মেঘনাথ সমদ্দার, লকিতুল্লাহ, আহাম্মেদ আবদুল্লাহ, শাহিনা আজমিন, মো. শওকত হোসেন, নাজমুন নাহার রিনা, মো. জাকির হোসেন, মো. কাওছার, বিষ্ণু রায়, মো. গোলাম মোস্তাফা, মো. নওরোজ কবির, তুহিন খান, মো. আমিনুর রহমান খান ও সোহেল হওলাদার সহ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন