বৃদ্ধ জয়নাল মিয়া তার স্ত্রী অনুফা বেগমকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পশ্চিম মানিকদীতে। এ দম্পতির সচ্ছল তিন ছেলে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব আর দেখাশুনা না করে বরং অত্যাচার করে তাড়িয়ে দেন ভিটাবাড়ি থেকে। এরপর ওই বৃদ্ধ নিজের একটি জমি বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার ওই তিন ছেলে ছিনতাইকারীদের সঙ্গে আঁতাত করে মোটরসাইকেল, লোহার রড এবং হাতুড়ি দিয়ে আক্রমণ করে বাবাকে। গোড়ালি, হাটু, হাত ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে ছিনিয়ে নেয় ৩১ লক্ষ টাকা।
দুই মাস আগে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার মানিকদী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিজের আপন ছেলেদের মারে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন (৭০) এখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। বাবার করা মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এবং গাজীপুর থেকে জয়নাল মিয়ার তিন ছেলে আবদুল হানিফ, আবদুল হান্নান ও আবদুল মান্নান এবং তাদের সহযোগী সোহেলকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া ২৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, গত ২৮ জুন জয়নাল মিয়া বসতভিটার জমি বিক্রি করেন। জমি বিক্রির টাকা ব্যাগে নিয়ে রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাওয়ের মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। একপর্যায়ে মানিকদীতে বাসার কাছে পৌঁছালে আবদুল হানিফ তার অপর দুই ভাইকে নিয়ে মোটরসাইকেলের পেছনে বসা জয়নালকে লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এসময় জয়নালকে তাঁর জামাতা রক্ষা করতে এলে পিটিয়ে তাঁর পা ভেঙে দেন তাঁরা। একপর্যায়ে বৃদ্ধ মা এগিয়ে এলে তাঁকেও বেধড়ক পেটান সন্তানেরা। আহতদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির গুলশান বিভাগ।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান শনিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, জয়নাল মিয়ার টাকা ছিনিয়ে নিতে তার তিন ছেলে ছিনতাইকারী সোহেলসহ দুইজনের সঙ্গে আঁতাত করেছিলেন। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, আদালতের অনুমতিতে গ্রেফতার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ২৯ লাখ টাকা বৃদ্ধ জয়নালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। টাকা ফিরে পেয়ে খুশিতে তিনি কেঁদে ফেলেন। জয়নাল মিয়ার তিন ছেলেসহ গ্রেফতারর ব্যক্তি বলেছেন, ছিনতাই করা টাকার বাকি দুই লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ