বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার নয়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আত্মগোপনে চলে গেছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
দুর্নীতি ও অনিয়মসহ নানা অভিযোগে গত ৬ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের মিয়া সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১২ নভেম্বর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাসান ইমাম জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০১৮ সালে অবসরে যান। তখন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল কাদের মিয়া ৬ মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয় স্থানীয় এক অভিভাবক। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেন ইউএনও।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৬ নভেম্বর আব্দুল কাদের মিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। বরখান্তের চিঠিতে বিদ্যালয়ের সকল কিছু জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। গত ১১ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্তের চিঠি গ্রহণ করে আত্মগোপনে চলে যান। গত ১২ নভেম্বর থেকে তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, সাবেক ওই শিক্ষকের কাছে বিদ্যালয়ের অনলাইনের ১৪টি পাসওয়ার্ড রয়েছে। এ ছাড়াও সকল রেজিস্ট্রার রাখার আলমারির চাবিও তার কাছে। এসব কিছু বুঝিয়ে না দিয়ে আত্মগেপানে চলে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
তিনি জানান, আগামী ২৮ আগস্ট বিদ্যালয়ের চারটি শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা নেওয়াসহ তাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওকে জানানো হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জের মেঘনা নদীর তীরের জনপদ উলানিয়া ইউনিয়নে নয়াখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিওভুক্ত এবং দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ আঁকড়ে থাকার জন্য পরিচালনা পর্ষদকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ আটকে রাখেন আব্দুল কাদের মিয়া। এই বিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক মিরাজ হোসাইন ৪২টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম দুর্নীতি তুলে ধরে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন। প্রতিটি অভিযোগের পক্ষে প্রমাণপত্র দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অনুদানের আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ, ২০২২ সালে অবৈধভাবে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া, জেএসসি পরীক্ষায় নকল করতে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মেহেন্দিগঞ্জের ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম মশিউর রহমান বলেন, আগামী রবিবার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই