বাংলাদেশে উৎপাদিত শুঁটকির ৮৭ শতাংশই কীটনাশকমুক্ত ও ভোক্তার জন্য নিরাপদ, গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা ৪০৫টি শুঁটকির নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর মাত্র ১৩ শতাংশে কীটনাশকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে রান্না বা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর এসব কীটনাশকের প্রভাব অনেকাংশে হ্রাস পায় বলেও জানিয়েছেন গবেষকরা।
বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত এক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। রাজধানীর শাহবাগে বিএফএসএ কার্যালয়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া পাঁচটি অঞ্চল- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, দুবলার চর, সুনামগঞ্জ ও চলনবিল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে দেখা যায়: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছুরি শুঁটকি (চট্টগ্রামে ৫৭%, কক্সবাজারে ৫৫%), চলনবিলে টাকি শুঁটকি (৩৭%) ও দুবলার চরে লইট্ট্যা শুঁটকি জনপ্রিয় (৪৬%)।
গবেষণায় এনডোসালফান সালফেট সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে, পাশাপাশি ডেলড্রিন, হেপটাচলোর ইপোক্সিসাইট ও বেটা এনডোসালফান কিছু নমুনায় ধরা পড়ে। গবেষকরা জানিয়েছেন, শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম (অক্টোবর-মার্চ) চলাকালীন পর্যাপ্ত রোদ না থাকলে সংরক্ষণ ও পোকামাকড় দমনে অনেক সময় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ড. মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের ৬০ শতাংশ প্রোটিনের উৎস মাছ ও মাংস। শুঁটকি প্রক্রিয়ায় সচেতনতা কম থাকায় কখনো কখনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তবে তা সবসময় নয়।
তিনি জানান, শুটকির ব্যবহার গড়ে দৈনিক কক্সবাজারে ১৫.৭২ গ্রাম, চট্টগ্রামে ১৪.৪৮ গ্রাম, সুনামগঞ্জে ৭.৮৪ গ্রাম, চলনবিলে ৯.৫৬ গ্রাম এবং দুবলার চরে ১২.২২ গ্রাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহার আইনত অপরাধ। এটি দেশের সার্বিক চিত্র নয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। প্রয়োজনে বৃহৎ পরিসরে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু সামাজিকভাবে নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করে ভেজালের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। শুঁটকিতে কীটনাশক ব্যবহার অবশ্যই ভেজাল হিসেবে গণ্য হবে।
বিএফএসএ'র সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার ড. নাজমুল বারী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিএফএসএ'র সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শোয়েব।
বিডি প্রতিদিন/মুসা