রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৮৮টি সড়ক-মোড়ের মধ্যে ৬২টি ইন্টারসেকশনকে রিমোট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালের আওতায় আনা হচ্ছে। যন্ত্রের মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করে রিমোট কন্ট্রোল ব্যবস্থায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সে কারণে রিমোট সিস্টেমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডায়াগ্রামে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এজন্য ভারত থেকে আনা হয়েছে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক অবস্থায় সাতটি ইন্টারসেকশন নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, কার্জন হলের সামনে, কদম ফোয়ারা ও কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়। এসব মোড়ে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে যানবাহন চলাচল শুরু করবে। এজন্য ভারত থেকে একটি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম আনা হয়েছে। তারা যন্ত্রগুলো পরীক্ষা করে সব সিস্টেম ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সফলতা এলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এ কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে বাকি সব ইন্টারসেকশনে এই রিমোর্ট কন্ট্রোল অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ ও কেইস প্রকল্পের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহে সাতটি স্থানে অটো সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশের হাতে রিমোট হস্তান্তর করব। এজন্য সর্বশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করতে সরেজমিন পরিদর্শনে নেমেছি। এরই মধ্যে ২০টি স্থানে অটো সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে।’

তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পের জন্য বিদেশ থেকে ইতিমধ্যেই ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৪টি রিমোট কেনা হয়েছে। প্রতিটি ইন্টারসেকশনের জন্য থাকছে দুটি রিমোট। কয়েকটি যন্ত্রও পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে চালু করা হয়েছে। এ দুটি স্থানে যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে সে অনুযায়ী অন্যগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে রাজধানীর ২০টি স্থানে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকা সিগন্যাল বাতিগুলো মেরামত করে যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এগুলো রিমোট কন্ট্রোলের আওতায় আসবে। নগরীর যেসব স্থানে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু হয়েছে সেগুলো হচ্ছে— ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, পল্টন, কাকরাইল, নাইটিঙ্গেল মোড়, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, বেইলি রোড, ধানমন্ডি-২৭, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি-১০ ও ধানমন্ডি-৭। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার একটি সিগন্যাল বাতিও মেরামত করা হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে কাজটি আটকে আছে বলে জানা গেছে। যানজট নিরসনে ২০০১-০২ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৮টি সড়ক-মোড়ে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়। নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতিগুলো স্থাপন করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু নানা ধরনের ত্রুটির কারণে নির্মাণ শেষে এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। এতে যে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া আছে তার সঙ্গে বাস্তব যানবাহনের পরিসংখ্যানের কোনো সামঞ্জস্য ছিল না। সে কারণে বেশ কয়েকবার পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পর সফলতা না পাওয়ায় তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। ২০০৮ সালের শেষের দিকে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। সে সময় উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও ভেঙে পড়ে। শহরে দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে কিছু সময় পরই কাউন্ট ডাউন বন্ধ করে আগের মতো হাত দিয়ে সিগন্যাল ব্যবস্থায় ফিরে যায় ট্রাফিক পুলিশ। পরে ২০১০ সাল থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির দ্বিতীয় দফায় অর্থায়ন করা হয়। মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রকল্পটির সফলতা পায়নি নগরবাসী। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে এই সিগন্যাল বাতিগুলো চালু করার উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। তবে এতে সময়ের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকবে সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের কাছে। রিমোটের মাধ্যমে এটি কন্ট্রোল করা হবে। আপাতত স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের মাধ্যমে নগরীর ২০টি স্থানে ট্রাফিক কন্ট্রোল চালু করে যানবাহন চালকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        