৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৯:০৩

কুকুর নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নগরী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কুকুর নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত নগরী

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় কুকুর নিধন ও কুকুর রক্ষার দাবিতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দুটি পক্ষ। একপক্ষ চায় বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে। অন্যপক্ষ কুকুর রক্ষার দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে ছবি : বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুকুরের জীবন-মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে রাজপথে নেমেছে মানুষ। একপক্ষ চায় লোকালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক কুকুর, আরেক পক্ষ কুকুর নিধনের ঘোর বিরোধী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কুকুর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মৌখিক সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। এ সিদ্ধান্ত চাউর হলে কুকুর নিধনের পক্ষে-বিপক্ষে নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিএসসিসি ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১৫টি কুকুর মাতুয়াইলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আমাদের অভিযোগ করেছিলেন। এ জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু কুকুর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এটা কোনো অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত নয়। বন্ধ্যত্বকরণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হবে কিনা তা আমার জানা নেই।’

শহর থেকে কুকুর সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত বুধবার নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে প্রাণী প্রেমী সংগঠনগুলো। তারা কুকুর নিধনকে বেআইনি মনে করছেন। ‘কেয়ার ফর পস’, ‘অভয়ারণ্য’, ‘স্টেলা’, ‘পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’, ‘উই আর নেচার’ এবং ’এক বেলার খাবার বোবা প্রাণীদের জন্য’ নামের সংগঠনগুলো এই কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন থেকে তারা অপসারণ করে ঢাকা শহরে কুকুর কমানোর পরিবর্তে বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচি চালুর দাবি জানান।

অভয়ারণ্যের প্রতিষ্ঠাতা রুবাইয়া আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দক্ষিণ সিটির তুলনায় বেশি কুকুর আছে। তারা বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচিতে সহায়তা করছে কিন্তু দক্ষিণ সিটি করপোরেশন করছে না। আইন অনুযায়ী, কুকুর নিধন এবং অপসারণ বেআইনি। আমরা সিটি করপোরেশনকে আইন মেনে চলার আহ্বান জানাচ্ছি।’ পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রাকিবুল হক এমিল বলেন, ‘মাতুয়াইলে অপসারণ করা হলে কুকুরগুলোর জীবনধারা ব্যাহত হবে। এটা প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯-এর পরিপন্থী। ঢাকার ৭০ শতাংশ কুকুর সরকারের বন্ধ্যত্বকরণ কর্মসূচির আওতায় আছে। তাই শহর থেকে অপসারণের কোনো প্রয়োজন নেই।’ পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী ডিএসসিসির নগর ভবনের মূল ফটকের সামনে মানুষজন জড়ো হতে থাকে। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেয়। নানা ধরনের ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে কুকুর স্থানান্তরের প্রতিবাদ জানান তারা। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, কুকুর সরিয়ে নেওয়া বা মেরে ফেলা প্রাণী অধিকারের চূড়ান্ত লংঘন। ‘মানুষ হতে সাবধান’ লেখা ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিলেন সাইফুর রহমান। তিনি বলেন, কুকুর নিধন করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কুকুরের ভূমিকা রয়েছে। এভাবে খাদ্য শৃঙ্খল নষ্ট হবে। কুকুর মেরে ফেলা কখনো মানবিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। বান্ধ্যত্বকরণ প্রকল্প শুরু করলে সব সমস্যার সমাধান হয়। একই দিনে কুকুর নিধনের পক্ষেও নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। ডিএসসিসি এলাকায় পথকুকুর নিধন ও স্থানান্তরকে স্বাগত জানিয়ে মানববন্ধন করেছে নগরবাসী। গত বুধবার সকালে নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি নগরবাসী’ লেখা ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে দেড় শতাধিক মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধনে তারা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র পথকুকুর নিধনের ঘোষণা দিয়ে খুব সময়োপযোগী ও জনদরদী পদক্ষেপ নিয়েছেন। যদিও কিছু স্বার্থান্বেষী বেসরকারি সংস্থা প্রাণী প্রেমের নাম দিয়ে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তারা বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে পথকুকুর মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। এসব কুকুর পথচারী দেখলে আক্রমণ করে, অনেককে কামড়ে আহত করে। বিশেষ করে রাতে ও ভোরে নামাজের সময় মুসল্লিদের ওপর কুকুরের আক্রমণ নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পথকুকুরের কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। প্রাণীদের নিরাপদ বসবাসের স্থান বনজঙ্গল। যে প্রাণীর আধিক্য জনমানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে, তা নিধনে বাধা দেওয়া স্বার্থান্বেষী আচরণ। মানববন্ধনের উদ্যোক্তা এমডি জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা কুকুর নিধনের পক্ষে নই, আমরা কুকুরের অত্যাচার ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। এর কারণে মানুষের নিত্যদিনের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই একে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হোক।’

উল্লেখ্য, দক্ষিণ সিটি এলাকার প্রায় ৬০ হাজার কুকুর থেকে অর্ধেকসংখ্যক বেওয়ারিশ কুকুর ধাপে ধাপে বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ডিএসসিসি। পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশের কারণে এখন দোটানায় পড়েছে সংস্থাটি। তাই করণীয় ঠিক করতে খুব দ্রুত বৈঠকে বসবে ডিএসসিসি। এর আগে গত ৫ আগস্ট বংশালের বাসিন্দা সোহানুর রহমান ডিএসসিসিতে আবেদন করে জানান, ‘এ এলাকায় কয়েকজনকে কুকুর কামড় দিয়েছে। কুকুরের ভয়ে অনেকেই বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে।’ সিক্কাটুলীর বাসিন্দা মোসা. নিলু বলেন, ‘এর আগে নাজিরাবাজার এলাকায় ভাড়া থাকতাম। কুকুরের কামড়ের ভয়ে বাসা পরিবর্তন করে সিক্কাটুলীতে এসেছি। এখানেও একই অবস্থা।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর