শিরোনাম
সোমবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

৪০ বছর পর বন্ধ হলো শিশুপার্ক

মোস্তফা কাজল

৪০ বছর পর বন্ধ হলো শিশুপার্ক

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণকাজের প্রয়োজনে রাজধানীর শাহবাগের শিশুপার্কটি বন্ধ হয়ে গেল। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ৪০ বছরের পুরনো এ বিনোদন কেন্দ্রটির সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ হলেও নগরবাসীর অনেকেই সে তথ্য জানেন না। ফলে অনেকেই শিশু-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সহকারী প্রকৌশলী ও শিশুপার্কের ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেছেন, নোটিস দিয়েই পার্কটি বন্ধ করা হয়েছে। গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পার্কের দুটি প্রবেশপথে ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের (যান্ত্রিক) নির্বাহী প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদের নামে দেওয়া একটি বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের (তৃতীয় প্রকল্প) অধীনে ৫০০টি ভূগর্ভস্থ গাড়ি পার্কিং, দৃষ্টিনন্দন জলাধারসহ হাঁটার পথ, আন্ডারপাস, মসজিদ ও অত্যাধুনিক রাইডসহ শিশুপার্কের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯। আরও জানা গেছে, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ১৯৭৯ সালে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রবেশপথের প্রধান ফটকে লেখা রয়েছে, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শাহবাগ শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন কাজ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন থাকায় যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যই কেন্দ্রীয় শিশুপার্ক সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। পার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজের সমাপ্তির পর শিশুপার্কটি সর্বসাধারণের জন্য খোলার বিষয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। দেখা গেছে, পার্কের ভিতরে ভাঙচুর ও সংস্কার কাজ চলছে। আবালবৃদ্ধবনিতাদের কাছে এক নামে পরিচিত শিশুপার্কটি এখন ধ্বংসস্তূপ। হঠাৎ করে অপরিচিত কেউ দেখলে মনে করবে যুদ্ধক্ষেত্র। বড় বড় বুলডোজার দিয়ে রাইডগুলো ভাঙা হচ্ছে। সেগুলো এদিক-সেদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। টিকিট কাউন্টারগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। দক্ষিণ দিকের ফুডকোর্টগুলো ভাঙার কাজ চলছে। বড় বড় মাটি কাটার ড্রেজিং মেশিনে মাটি খুঁড়ে গর্ত করা হচ্ছে। গোটা শিশুপার্ক ধুলায় ধূসর। শিশুদের বিনোদনের জন্য পাবলিক সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম এই শিশুপার্কটি ১৯৮৩ সাল থেকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা এ পার্ক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। শিশুপার্কটিতে ১২টি রাইড রয়েছে, এর মধ্যে একটি খেলনা ট্রেন, একটি গোলাকার মেরিগো রাউন্ড রাইড ও বেশ কয়েকটি হুইল রাইড। ১৯৯২ সালে এ পার্কে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সৌজন্য হিসেবে একটি জেটবিমান দেওয়া হয়। রাজধানী ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হওয়ায় ধনী-গরিব প্রতিটি পরিবারের কাছে জনপ্রিয় ছিল শিশুপার্কটি।

বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি শুক্রবার পার্কটি বেলা আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত চালু ছিল। রবিবার বাদে অন্য দিনগুলোতে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাইডগুলো চালু থাকত। এ শিশুপার্কে প্রতিদিন ছয় হাজারের অধিক মানুষ আসত। আর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো আনন্দঘন সময়ে তা কয়েকগুণ বেড়ে যেত।

সর্বশেষ খবর