বৃহস্পতিবার, ১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কী হয়েছিল ডা. শাহাদাত-লুসির মধ্যে

চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনা

রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম

কী হয়েছিল ডা. শাহাদাত-লুসির মধ্যে

সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলা করেছেন খোদ বিএনপি নেত্রী ডা. লুসি খান। কী  হয়েছিল আসলে ডা. শাহাদাত ও ডা. লুসির মধ্যে? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উৎসুক মানুষ। এ ঘটনায় দলটির অভ্যন্তরে রয়েছে উদ্বেগ অসন্তোষ। মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কে এই লুসি খান? 

প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে কে এই লুসি খান? নিজের ফেসবুক পেজে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতাদের  সান্নিধ্যের ছবি আপলোড দিয়েছেন তিনি। গেল চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর ডা. শাহাদাতের সমর্থনে কাজ করেন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মূলত আদম পাচারের টাকা নিয়েই ঘটনার সূত্রপাত। বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগরীর সর্বশেষ কমিটির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ডা. লুসি খান ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান হলেও মানব পাচারে জড়িত থাকায় অভিযুক্ত। বিদেশ পাঠানোর নাম করে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারণার অভিযোগে মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) চিকিৎসক হিসেবে কর্মকালেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।  এমনকি চাকরিচ্যুতও হন। লন্ডনে অবস্থানকালে পাকিস্তানের এক নাগরিককে বিয়ে করলেও সেই সংসার টেকেনি তার। চকবাজারে নিজ এলাকায় রিকশাচালক, মুদি দোকানি থেকে শুরু করে নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে অসংখ্য অঘটনের জন্ম দেন এই ‘অঘটন ঘটন পটীয়সী’। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মানব পাচারের টাকা লেনদেন ও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম মোরশেদ খানের ‘মামাতো বোন’ পরিচয় দিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লোক প্রেরণের ব্যবসার নামে প্রতারণা করে চলেছেন ডা. লুসি। অনুমোদনহীন একটি এনজিও ‘জীবনচিত্র’ এর আড়ালে চলছে তার এই অপব্যবসা। শুধু ডা. শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে নয়, অতিসম্প্রতি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আরেক সদস্য ইয়াসিন চৌধুরী লিটনের বিরুদ্ধেও ‘শ্লীলতাহানি চেষ্টা’র মামলা করেছেন এই বিএনপি নেত্রী।  জামিনে রয়েছেন এই মামলার আসামি। সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগে লুসির দায়ের করা মামলায় মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাতের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেছে আজ বুধবার। অনুসন্ধানে প্রকাশ, ডা. শাহাদাতের গ্রামের বাড়ির এক পরিচিতজনকে বিদেশ পাঠানোর নাম করে টাকা নিয়ে প্রতারণা করেন ডা. লুসি। চট্টগ্রামের বিএনপি ঘরানার প্রায় সবাই জানেন, সাম্প্রতিক সময়ে লুসিকে রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেন  ডা. শাহাদাত। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা শাহাদাতকে অভিযোগ জানান লুসির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে লুসিকে শাসিয়েও দেন ডা. শাহাদাত। এদিকে লুসির পরিচালিত এনজিওর সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা। তার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নাম করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে লুসির বিরুদ্ধে। মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ফুসলিয়ে সম্পত্তির স্বত্ব নিয়ে নিজের স্ত্রীকে তা হস্তান্তরের অভিযোগও উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা সম্প্রতি অভিযোগ করেন বলে জানান ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। এর মধ্যে মহিউদ্দিনের পিতার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর কাউন্সিলরের কাছে ‘ওয়ারিশ সনদ’ চান মহিউদ্দিনের পরিবার। কিন্তু সনদ নিতে মহিউদ্দিনকে ডেকে পাঠান ওয়ার্ড কাউন্সিলর। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মহিউদ্দিন আর কাউন্সিলর অফিসে আসেননি। প্রতারিতরা ওতপেতে ঢাকায় তিনি ‘গা ঢাকা দিয়েছেন’ বলে অভিযোগ উঠলেও ডা. লুসি খানের অভিযোগ- ‘গেল চসিক নির্বাচনের আগে লুসির পরিচালিত এনজিও থেকে চাঁদা না দেওয়ায় চাঁদা ও মুক্তিপণের দাবিতে মহিউদ্দিনকে অপহরণ করেন ডা. শাহাদাত’। শাহাদাতসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন লুসি। লুসির কাছ থেকেই পাওনাদার দুজন, যথাক্রমে প্রবাসী মুজাফফর ও তার স্ত্রী ফাতেমাকেও আসামি করা হয় এ মামলায়। অথচ গত চসিক নির্বাচনের আগে ডা. লুসির  চিকিৎসাসেবা ক্যাম্পে প্রধান অতিথি হন ডা. শাহাদাত। অনুসন্ধানকালে বিদেশ নেওয়ার নামে টাকা আদায়ের আরও গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে ডা. লুসির বিরুদ্ধে। প্রতারণার মামলায় চার মাস কারাভোগ করেছেন ডাক্তার লুসি। হালিশহরের শহীদ, বায়েজিদের আহাট দক্ষিণ বাকলিয়ার ইউসুফ খানসহ অনেকেই লুসি খানের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে বিদেশ পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম-চান্দগাঁও-বোয়ালখালী সংসদীয় আসনের একাধিকবারের এমপি সাবেক মন্ত্রী এম মোরশেদ খানের নাম ভাঙিয়ে চলেন লুসি খান। এ বিষয়ে এম মোরশেদ খানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তার একান্ত সহকারী মানিক জানান, আসলে মোরশেদ খানের মামাতো বোন নন লুসি।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রাক্তন সভাপতি আহমেদ খলিল খানও অভিন্ন কথা জানান। তিনি বলেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ভাঙানোর অভিযোগ রয়েছে লুসির বিরুদ্ধে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর