সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঐক্যে বাজিমাত হাবিবের, আতিক ভাগ্য বিড়ম্বিত, সব হারালেন শফি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

ঐক্যে বাজিমাত হাবিবের, আতিক ভাগ্য বিড়ম্বিত, সব হারালেন শফি

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের জয়লাভের পর সিলেটজুড়ে চলছে নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ। হাবিবের এই জয়কে আওয়ামী লীগের ঐক্যের বাজিমাত হিসেবেই দেখছেন ভোটাররা। লাঙ্গলের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লবের সম্ভাবনা থাকলেও আতিকুর রহমান আতিকের পরাজয়কে তাঁর ভাগ্য বিড়ম্বনা বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। আর দলের অবাধ্য হয়ে জীবনের শেষ নির্বাচন করে শফি আহমেদ চৌধুরী সব কূলই হারিয়েছেন বলে মনে করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও আসনটিতে নির্বাচনী উত্তাপে কোনো ভাটা পড়েনি। নির্বাচনে অংশ নেন আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক, বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েত মোহাম্মদ মিয়া। শুরু থেকেই প্রচারণায় নেমে উত্তাপ ছড়াতে থাকেন হাবিব, আতিক ও শফি। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। শেষ দিকে এসে দল থেকে বহিষ্কৃত শফি আহমেদ চৌধুরী ভোটযুদ্ধে দুর্বল হয়ে পড়লেও সমানতালে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন হাবিব ও আতিক। মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর এই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন প্রায় দুই ডজন নেতা। তবে মনোনয়ন বাগিয়ে চমক দেখান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। এরপর মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ, স্থানীয় নেতৃত্ব নিয়ে বহুধা বিভক্তিসহ নানা কারণে প্রচারণার শুরুতে বেকায়দায় পড়েন তিনি। স্থানীয় অনেক নেতা দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে কাজ করার পরিবর্তে উল্টো লাঙ্গলের পক্ষাবলম্বন করেন। এই অবস্থায় নৌকার বিজয় নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। কিন্তু শেষ সময়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দফায় দফায় সিলেট আগমন ও প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে।

 নির্বাচনের চার দিন আগ থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সিলেট অবস্থান ও দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে স্থানীয় নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টিতে রাতারাতি বদলে যায় নির্বাচনের চিত্র। তৈরি হয় ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেই ঐক্যের ফল হিসেবে বাজিমাত করেন হাবিবুর রহমান হাবিব। ৬৫ হাজার ৩১২ ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন।

নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে লাঙ্গল প্রতীকের জয়ের পরিবেশ তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে পরাজয়কে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের ভাগ্য বিড়ম্বনা হিসেবেই দেখছেন স্থানীয়রা। ১৯৯১ সালে আতিক সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ মুকিত খানের কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। ওই সময় সিলেট-৩ আসন জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবেই বিবেচিত হতো। জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করলে সহজে জয়ী হওয়া যাবে এমন সম্ভাবনা থেকে পরে দলত্যাগ করেন আতিক। কিন্তু বারবার জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে আসনটি থেকে নির্বাচন করেও তিনি বিজয়ী হতে পারেননি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচন করেন আতিক। এর আগে আসনটি থেকে একাধিকবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হলেও তিনি পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-৩, হবিগঞ্জ-১ ও ৩ আসন থেকে মনোনয়ন চান আতিক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাকি দুটি আসন বাদ দিয়ে হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন। এবার সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে তাঁর জয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাধারণ ভোটারদের সমর্থন ও ইভিএমে ভোট গ্রহণ সব মিলিয়ে তাঁর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন অনেকেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে জয়োল্লাস লেখা হয়নি। সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রমুখী না হওয়ায় ভাগ্য বিড়ম্বিত প্রার্থীর তকমা থেকে মুক্তি পাননি আতিক। নির্বাচনে তিনি পেয়েছেন ২৪ হাজার ৭৫২ ভোট।

জীবনের শেষ নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে দলের অবাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী। কিন্তু তাঁর প্রতীকে পড়েছে মাত্র ৫ হাজার ১৩৫ ভোট। এই পরাজয়ে শফি আহমেদ চৌধুরী জামানত এবং একই সঙ্গে হারালেন দলও। সব কূল হারানো শফি আহমেদ চৌধুরী কিছু দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর