শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সুপেয় পানির সংকট বরেন্দ্রে

অকেজো হয়ে পড়েছে বেশির ভাগ নলকূপ, ভূগর্ভের অনেক স্থানে পানির স্তরই নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

সুপেয় পানির সংকট বরেন্দ্রে

রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বহরইল গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল লতিফ। তাদের বাড়িতে নেই নলকূপ। গ্রামের গভীর নলকূপটিও অকেজো। খাবার পানি আনতে তার পরিবারের লোকজনকে ১ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। বহরইল গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর একই অবস্থা। বিশুদ্ধ পানি সংকট এখানে দিন দিন চরমে উঠছে। বৃষ্টিপাত না হওয়া, সেই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানি ভয়ংকরভাবে নিচে নেমে যাওয়ায় এ সংকট চরমে উঠেছে। রাজশাহীর তানোর উপজেলার মু-ুমালা পৌরসভা সদরেও একই অবস্থা। পৌরসভা সদরের বাসিন্দা গৌতম কর্মকার জানান, তার বাড়িতে নলকূপ অনেক আগেই বাদ হয়ে গেছে। এখন যে সাবমার্সেবল পাম্প আছে, তাতেও উঠছে না পানি। পাশের গ্রাম থেকে তাদের পানি নিয়ে আসতে হয়।

রাজশাহী অঞ্চলে ভয়ংকরভাবে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব ও দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপকহারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এতে জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বেশির ভাগ নলকূপে পানি উঠছে না। এ উপজেলায় ৩ হাজার ৫৪৯টি নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। সরকারি মোট ৫ হাজার ১৬৬টি নলকূপের মধ্যে ৩ হাজার ৫৪৯টি অকেজো। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। যে নলকূপগুলো সচল আছে তাতে পানি ওঠার পরিমাণ কমে গেছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন ছিল ৮৫ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯৫ ফুট, রিশিকুল ইউনিয়নে ২০১৯ সালে পানির সর্বনিম্ন স্তর ছিল ৮০ ফুট, ২০২২ সালে নিচে নেমে হয়েছে ৯৫ ফুট। অন্য ইউনিয়নগুলোর চিত্রও একই। গোদাগাড়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী শাহীনুল হক বলেন, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থে পানি রিচার্জ হচ্ছে না, যার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পানি না পাওয়ায় নলকূপগুলো অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে গাছপালা লাগানো প্রয়োজন যাতে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। বৃষ্টিপাত বেশি হলো ভূগর্ভস্থে পানি রিচার্জ হবে, এতে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় সরকারের পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) কাজ করছে। ওয়ারপো ২০২১ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইড্রোলজিক্যাল মডেলিংয়ের মাধ্যমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় মাটির নিচে পানির উপস্থিতি পরীক্ষা করেন। ওই তিন জেলার ৫০টি স্থানে এ পরীক্ষা চালানো হয়।

অনেক জায়গায় প্রায় দেড় হাজার ফুট পর্যন্ত গভীরে গিয়েও কোনো পানি পাওয়া যায়নি।               

বিএমডিএর তথ্য অনুযায়ী, বরেন্দ্র অঞ্চলের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭১০ মিলিয়ন ঘনমিটার। এই পরিমাণ পানি ১ বিঘা আয়তনের ২ মিটার গভীরতাবিশিষ্ট ১৮ লাখ পুকুর ভরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান জানান, যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি তত খারাপ হচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার এই অঞ্চলে বিশুদ্ধ পানি দুষ্প্রাপ্য করে তুলতে পারে। তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে হলে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর