বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

২৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই অস্থির চট্টগ্রাম

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

২৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই অস্থির চট্টগ্রাম

গতকাল ২৫ মিনিটের বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগর -বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম মহানগরে গতকাল দুপুরে ২৫ মিনিট বৃষ্টি হয়। তাতেই স্থবির পুরো শহর। তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। লেগে যায় অসহনীয় যানজট। দুপুরে স্কুল-কলেজ ছুটির সময় হওয়ায় দীর্ঘতর হয় যানবাহনের লাইন। ভোগান্তি ও দুর্ভোগে নাভিশ্বাস ওঠে নগরবাসীর। পতেঙ্গার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। মাত্র ২৫ মিনিটের বৃষ্টিতেই পানি উঠে যায় নগরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নিচু এলাকায়। চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্য পড়তে হয় মানুষকে। বর্তমানে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পৃথক চারটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবু বৃষ্টির জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয় নগরবাসীকে। চকবাজারের বাসিন্দা খোরশেদুল আলম বলেন, ‘কাতালগঞ্জ মোড়ে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রায় হাঁটুপানি জমে যায়। এটি দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। এ সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না!’ চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই এর সুফল মিলবে। তবে এখন বৃষ্টির পর পানি জমে গেলে তা দ্রুত নেমে যাওয়ার জন্য নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কার করা হয়েছে। ফলে পানি এখন আগের চেয়ে কম সময়ে নেমে যাচ্ছে।’ সরেজমিন দেখা যায়, গতকাল বৃষ্টির পরই পানি জমে যায় কাতালগঞ্জ মোড় এলাকায়। এখানে পানি জমে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে চকবাজার, পাঁচলাইশ মোড়, বাদুড়তলা, চকবাজার কাঁচাবাজার, চমেক হাসপাতালের সামনের সড়কসহ আশপাশের সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।

একইভাবে চকবাজার কাঁচাবাজার সড়কেও ওঠে পানি।

পানি ওঠার কারণে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। লেগে যায় যানজট।

জানা যায়, নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। চউক ‘কর্ণফুলী নদীর তীরবরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৭০ কোটি টাকা। তা ছাড়া চসিক বাস্তবায়ন করছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৯১৪ কোটি টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করছে ‘চট্টগ্রাম মহানগরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ জলাবদ্ধতা নিষ্কাশন উন্নয়ন’ প্রকল্প। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু বড় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান থাকলেও এর কোনো সুফলই পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি হলেই হচ্ছে জলাবদ্ধতা। চলমান প্রকল্পগুলোয় বর্তমানে খালের দুই পাশে প্রতিরোধ দেয়াল ও সড়ক নির্মাণ, কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে স্লুইসগেট স্থাপন, খালের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-উন্নয়ন, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও নতুন নালা-নর্দমা নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে কাজগুলো এখনো চলমান।

চসিকসূত্রে জানা যায়, নগরে ছোটবড় ৫৭টি খাল আছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অধীন ৩৬টি খনন-সংস্কার কাজ চলছে। বাকিগুলো চসিক নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পরিষ্কার করার কথা থাকলেও তা হয়নি। তবে কয়েক মাস আগে থেকে চসিক খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অন্যদিকে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা আছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই খালের পাড় রয়েছে ১৯ কিলোমিটার। উন্মুক্ত নালা রয়েছে ৫ হাজার ৫২৭টি স্থানে। বর্ষাকালে এসব নালা ড্রেনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। গত এক বছরে নালা ড্রেন ও খালে পড়ে মারা গেছেন পাঁচজন। খোঁজ মেলেনি একজনের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর