মৎস্য শিল্প বিদেশে রপ্তানি উপযোগী করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও নীতিমালা গ্রহণ করার সময় এসেছে। সরকার এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
শনিবার দিনব্যাপী রাজশাহী অঞ্চলের মৎস্য শিল্প রপ্তানিমুখী পণ্য হিসেবে সংযোগ স্থাপনের জন্য ফিশারীজ অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বাণিজ্যিক মৎস্য চাষী সমবায় সমিতির যৌথ আয়োজনে আন্তর্জাতিক মৎস্য সামিট ও মেলা’য় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, রাজশাহীর চাষীরা বাংলাদেশের মৎস্য চাষে যুগান্তকারী পরিবর্তন করেছেন। বিদেশনির্ভর বড় আকারের রুই থেকে রাজশাহীর জীবন্ত রুইজাতীয় মাছ আজ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়েছে। আজ সময় এসেছে বিদেশে রপ্তানি উপযোগী করার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি, নীতিমালা গ্রহণ করা। সরকার এ কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাবি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকিব বলেন, বাংলাদেশের মৎস্য চাষের বিকাশে এবং স্বাদুপানির মাছ রপ্তানিতে আজকের এই সামিট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মৎস্য অধিদপ্তর ঢাকার মহাপরিচালক আব্দুর রউফ বলেন, আজকের এই উদ্যোগকে সামনে এগিয়ে নিতে মৎস্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ফিশারীজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মন্ডল বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে এমন আয়োজন এবারই প্রথম। আমাদের বিশ্বাস এই উদ্যোগ দেশের রপ্তানি শিল্পে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাবি ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন। অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন এবং অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ড. আ.ন.ম. বজলুর রশীদ। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. অক্ষয় কুমার সরকার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এসকে কামরুল আলম, রাজশাহী বাণিজ্যিক মৎস্য চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম প্রমুখ।
টেকসই মৎস্য পালন ও রপ্তানির জন্য অংশীজনদের সংযোগ স্থাপন করতে রাজশাহীতে এ আয়োজন। সামিটে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং আমেরিকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা, গবেষক, শিক্ষক, মৎস্য চাষী, আমদানি ও রপ্তানিকারক, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও নীতি নির্ধারকরা উপস্থিত থেকে রাজশাহী অঞ্চলের মৎস্য চাষ ও এর রপ্তানী বাজার সংযোগ স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সামিটের মেলায় সংশ্লিষ্ট ২৫টি কোম্পানি (ফিড, একুয়া মেডিসিন, যন্ত্রপাতি) তাদের বিভিন্ন পণ্য প্রদর্শন করে। এই সম্মেলন থেকে একটি সুপারিশমালা সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের বড় অংশ একসময় আমদানি নির্ভর ছিল। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার ও ভারত থেকে প্রচুর রুই জাতীয় মাছ আমদানি করা হত। সারাদেশে যখন ১-২ কেজি ওজনের রুই জাতীয় মাছের যোগান ছিল তখন ২০১৩-১৪ সালের রাজশাহী এলাকার পারিলা, পবা উপজেলার মৎস্য চাষীরা সর্বপ্রথম বড় আকারের পাঁচ থেকে ছয় কেজি রুই জাতীয় মাছ উৎপাদন শুরু করেন। রাজশাহী চাষীদের বড় আকারের রুই সারা দেশের ভোক্তাদের মাছে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। প্রাথমিকভাবে ফ্রোজেন হিসেবে মাছ সারাদেশে বিক্রি হলেও পরবর্তীতে জীবিত (লাইভ) মাছ হিসেবে বিক্রি হতে শুরু করে। বর্তমানে শুধুমাত্র রাজশাহী অঞ্চল হতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টি ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জীবিত মাছ যোগান দিচ্ছে। বর্তমানে রাজশাহীর মাছ গুণগত মানের কারণে দেশের বাহিরে রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের বিদেশে রপ্তান করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বাংলাদেশ শুধুমাত্র চিংড়ি রপ্তানির বাহিরে স্বাদুপানির মাছের রপ্তানি করে চীন (তেলাপিয়া), ভিয়েটনাম (পাঙ্গাস), থাইল্যান্ড (ভেটকি) এর মত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত