বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান কার্যালয়সহ ৩৬ অফিসে একযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ দেশের জেলা অফিস থেকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জানা যায়, গত বছরের বন্যা পরবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগের ছয় জেলা, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্যে এলজিইডির অধীনে নেওয়া হয় বাংলাদেশ সাসটেইনেবল রিকভরি ইমারজেন্সি অ্যান্ড রেসপন বা বি-স্ট্রং প্রকল্প। এতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করবে ১ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা এবং বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে। তবে কার্যক্রম শুরুর আগেই প্রকল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয়ে অস্বাভাবিক দাম নির্ধারণের অভিযোগ পায় দুদক। তাই এ অভিযান চালায় দুদক।
গতকাল আগারগাঁওয়ে প্রধান কার্যালয়ে অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক পাপন কুমার সাহা বলেন, বি-স্ট্রং প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ২০ এপ্রিল। প্রকল্পের এখনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে প্রকল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দাম নির্ধারণের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অনুসন্ধানে আসি। ওই প্রকল্পের ডিপিটি যিনি প্রস্তুত করেছেন তিনি উপস্থিত ছিলেন না। প্রকল্পের একেকটা স্ট্রিট সোলার লাইটের দাম ধরা হয়েছে ৭২ হাজার টাকা, অথচ পরিকল্পনা কমিশন জানায়- ওই লাইটের প্রয়োজনই নেই। ৪টি ল্যাপটপের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ লাখ টাকা। প্রকল্পের জন্য ৬০টি মোটরসাইকেলের ক্রয়ের প্রস্তাবের বিপরীতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে ৩৬টি কেনার কথা বলা হয়। এ ছাড়া কম্পিউটার ল্যাপটপ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণসহ অন্যান্য যে ব্যয় দেখানো হয়েছে- তা অস্বাভাবিক।
এ বিষয়ে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ ইঞ্জিয়ার আবদুল মান্নান বলেন, আমাদের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ঢাকার বাহিরে অবস্থান করছেন। এ প্রকল্পের এখনো কাজ শুরু হয়নি, কেবল একনেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমাদের কোনো প্রকল্পে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন গ্রহণ করা হয় এবং তাকে সাসপেন্ড করা হয়। যেখানে অনিয়ম হয়েছে ওখানে সাসপেন্ড হচ্ছে।
রাজশাহীতে এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, ঠিকাদারদের বিল প্রদানের ক্ষেত্রে এক্সট্রা কমিশন (ঘুষ) নেওয়া হচ্ছে। আমরা অফিসে নথিপত্র যাচাই করলাম, ঘুষের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাইনি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ পেলেও সেই কাজ অন্য লোক করছে, সেই তথ্য পেয়েছি। প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই এ অনিয়ম হচ্ছে। প্রচলিত আইন অনুযায়ী একটা কাজ যে ঠিকাদার পাবেন, তারই দায়িত্ব কাজটা শেষ করা। কিন্তু তিনি যখন তৃতীয় বা চতুর্থ ব্যক্তি দিয়ে করাচ্ছেন, সেখানে অনিয়মের সুযোগ থেকে যায়। তাই কাজ হস্তান্তরটা অপরাধের মধ্যেই পড়ে। এর আগে ১৬ এপ্রিল দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ অন্যান্য কাজে সেবা প্রার্থীদের হয়রানি এবং ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে দেশের ৩৫ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে অভিযান পরিচালনা করে দুদক।
দুদক উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, গতকাল আগারগাঁওয়ের এলজিইডি প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, রাজশাহী, দিনাজপুর ও জামালপুর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, বরিশালের মুলাদী, বগুড়ার শিবগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, কক্সবাজারের রামু, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, গাজীপুর সদর, গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া, যশোরের বাঘারপাড়া, মাগুরার শ্রীপুর, খুলনার বটিয়াঘাটা, কিশোরগঞ্জ সদর, কুড়িগ্রামের উলিপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, শরীয়তপুরের জাজিরা ও ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, নোয়াখালীর কবিরহাট, নওগাঁ সদর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পটুয়াখালী সদর, পিরোজপুরের নাজিরপুর, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া ও রাঙামাটির কাপ্তাই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে।