তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লাইসেন্স দেওয়া গণমাধ্যমগুলো তদন্তের আওতায় আনা হবে। গণমাধ্যমের রাজনীতিকরণই মূলত সাংবাদিকদের শত্রু। সাংবাদিকদের এ কথাটা গুরুত্ব দিয়ে বোঝা উচিত, সংবাদমাধ্যমগুলোর যে রাজনীতিকরণ হয়েছে, এটাই মূলত সাংবাদিকদের অধিকারহীনতার উৎস।
গতকাল রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে ডিএফপির সভাকক্ষে আয়োজিত ‘ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সাংবাদিক হত্যা-নিপীড়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, দৈনিক সংগ্রামের সাবেক সম্পাদক আবুল আসাদ, শীর্ষ নিউজের সম্পাদক একরামুল হক, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বিএফইউজের সহসভাপতি খায়রুল বাশার, বিএফইউজের সদস্য শাহীন হাসনাত। এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ সাংবাদিক হাসান মেহেদীর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম পপি, শহীদ সাংবাদিক প্রিয়র মা শামছি আরা জামান, নির্যাতিত সাংবাদিক আখতারুজ্জামান, বাংলানিউজ২৪.কমের জামালপুর প্রতিনিধি নিহত গোলাম রব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম।
সেমিনারে মো. মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে যে গণমাধ্যমগুলোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, আমরা খুব শিগগিরই সেগুলোর তদন্ত করব। কখন, কীভাবে এদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই অনুমোদনের ভিত্তিতে এরা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, ভুয়া সাংবাদিক তৈরি করেছে, সেটি তদন্ত করে দেখা হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই না আপনারা (সাংবাদিক) এ সরকারের (অন্তর্বর্তী সরকার) পক্ষে লিখুন। সরকারকে প্রশ্ন করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকারকে প্রশ্ন করলে সরকার আরও বেশি কাজ করে। সরকার আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে।
মাহফুজ আলম বলেন, কয়েকটি পত্রিকা জুলাই অভ্যুত্থান লেখে না। এরা লেখে জুলাই আন্দোলন। তারা জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সরকার বলে না। তারা বলে ক্ষমতার পট পরিবর্তন। এটা ইন্ডিয়ান ন্যারেটিভ। যার অর্থ এখানে একটা চক্রান্ত হয়েছিল, হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে। এটা কোনো সংবাদমাধ্যম করতে পারে না, যদি তার মধ্যে এতটুকুও নৈতিকতা থাকে। কিন্তু আমরা এ সংবাদমাধ্যমকে বন্ধ করিনি। আমরা কিছু করব না। জনগণ আপনাদের দেখে নেবে। শহীদ পরিবার আপনাদের দেখে নেবে। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর এবং শেখ হাসিনার ২০০৯-২০২৪-এ দুই শাসনামলকে বাংলাদেশের অন্য কোনো শাসনামলের সঙ্গে তুলনা করা অসমচীন। তাজ উদ্দীন আহমদকে মাইনাস করে যেভাবে শেখ মুজিব তার পরিবারের হাতে দল এবং রাষ্ট্রকে সমর্পিত করেছেন, তার মেয়ে এটাকে অনুসরণ করেছেন। আমি মনে করি, এটা একেবারে ইউনিক ঘটনা বাংলাদেশে। একটি পরিবার একটি দলকে ধ্বংস করেছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে যখন আমরা আসি, তখন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীকে প্রশ্ন করতে হবে তিনি পলাতক কেন? এর জন্য দায়ী শেখ হাসিনা এবং শেখ পরিবার। ৫ আগস্টের আগেই শেখ পরিবারের অধিকাংশ লোক এ দেশ থেকে পালিয়ে চলে গেছে। শেখ হাসিনা ছিলেন সর্বশেষ লোক যিনি শেখ পরিবার থেকে পালিয়ে গেছেন। একটি পরিবার একটি দলকে ধ্বংস করল।