ভুয়া সনদে জুলাই বিপ্লবের অনুদান বাগিয়ে নিয়েছেন সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের এক নেতা। ১০ মে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণকৃত ‘সি’ ক্যাটাগরির ২৩২ জন আহতকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেয় জুলাই ফাউন্ডেশন। সেখানে অনুদান গ্রহণ করতে গেলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহতসহ আন্দোলনের পক্ষের মানুষের মাঝে। তারা বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। সংক্ষুব্ধরা জানান, বিগত সরকারের সুবিধাভোগী আল হেলাল। তিনি বাউল সেজে গাইতেন শেখ মুজিবুর রহমান আর শেখ হাসিনার স্তুতিগাথা। আহত না হয়েও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এ তালিকায় কীভাবে নাম যুক্ত করেন তিনি, সেটা নিয়েই চলছে জোর আলোচনা। জেলা প্রশাসন গঠন করেছে তদন্ত কমিটি। জানা যায়, গেল বছরের ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবির আন্দোলনে সুনামগঞ্জে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ নির্বিচার গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়লে অনেকে আহত হন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানান, সংঘর্ষের দিন আল হেলাল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তবে জুলাই বিপ্লবের আহতদের অনুদান দেওয়ার বিষয়টি জানার পর আহত হওয়ার প্রমাণপত্র হিসেবে চোখে টিয়ার শেলের আঘাত পাওয়ার একটি ভুয়া ব্যবস্থাপত্র জুলাই ফাউন্ডেশনে দাখিল করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, আল হেলালকে যে চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রটি দিয়েছেন তাঁর নাম মো. আজিজুল হক। তিনি রোগী দেখতেন শহরের আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে। এ বিষয়ে ডা. আজিজুল হক বলেন, ‘৪ আগস্ট নয়, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে পুরোনো তারিখ দেখিয়ে একটি ব্যবস্থাপত্র নিতে আমার কাছে আসেন আল হেলাল। অনুরোধ করেন একটি ব্যবস্থাপত্র দিলে তিনি সরকার থেকে কিছু আর্থিক অনুদান পাবেন। তার পরও ব্যাক ডেটে আমি ব্যবস্থাপত্র দিতে রাজি হইনি। পরে চেয়ারম্যানের চাপে ব্যবস্থাপত্র দিতে বাধ্য হই। ৪ আগস্ট আল হেলাল আমার কাছ থেকে কোনো চিকিৎসা নেননি।’
হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চিকিৎসকের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ ব্যবস্থাপত্র হয় তো আল হেলাল সংগ্রহ করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেসব রোগী দেখেন তাদের নাম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ থাকে। ৪ আগস্ট উনার নাম আমাদের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ নেই। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
অভিযুক্তের পুরো নাম আল হেলাল মো. ইকবাল মাহমুদ। আওয়ামী লীগের পুরো শাসনকালে তিনি কখনো সাংবাদিক পরিচয়ে, কখনো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড আবার কখনো বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নেতা হিসেবে দাবড়ে বেড়াতেন স্থানীয় সরকারের অফিস থেকে আদালত পর্যন্ত। এখন তিনি ভোল পাল্টে নাম লিখিয়েছেন ভুঁইফোঁড় সংগঠন ‘জাতীয়তাবাদী বাউল দল’-এ। তিনি দাবি করেন, ‘৪ আগস্ট টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় আমার চোখে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ওই দিনই আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। অনুদান বাগাতে আমি কোনো প্রকার প্রতারণার আশ্রয় নিইনি।’
এদিকে ভুয়া সনদে আহত সেজে জুলাই ফাউন্ডেশনের অনুদান গ্রহণের অভিযোগ পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘অনুদান নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানের টাকা ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।’