রাজধানীতে জুয়ার বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যাত্রীছাউনি, চায়ের দোকান, ফুটওভার ব্রিজের ওপর কিংবা ফ্লাইওভারের নিচে সবখানে চলছে জুয়া। লুডু, পামিং, হাতের স্মার্টফোন ব্যবহার করে নানা উপায়ে জুয়ার আসরে বসে বাজি ধরা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বেটিং সাইটে বিভিন্ন খেলার ওপর বাজি ধরা ছাড়াও অনলাইনে লুডুসহ বিভিন্ন গেম খেলেও অর্থকড়ি খোয়াচ্ছে অসংখ্য মানুষ।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন দৃশ্য। মগবাজার হাতিরঝিলে দেখা যায় এক ব্যক্তি পামিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে পথচারীদের অর্থ। মগবাজার মোড়ে রাসেল নামে এক রিকশাচালককে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুয়ার লোভে পড়ে আজ ৫০০ টাকা খুইয়েছি। যা আয় করেছি পুরোটাই চলে গেছে। কোথায় খেলা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি দেখিয়ে দেন। হাতিরঝিল মগবাজার অংশের রেললাইনের পাশে চলছিল জুয়ার আসর। সেখানে প্রতিবেদক যেতেই তাকে ঘিরে ধরে উঠতি বয়সি কিছু তরুণ। পাশেই চায়ের দোকানে বিক্রেতা রফিক জানান, এখানে প্রতিদিনই এমন আসর বসে। কেউ বাধা দিলে উল্টো চক্রের অন্যরা এসে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সাধারণ মানুষের কিছু করার থাকে না। পাড়া-মহল্লায় তরুণ থেকে দরিদ্র রিকশাচালক, ধনীর দুলাল কেউ বাদ যাচ্ছে না এই নেশা থেকে। পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এমন অভিযোগে সিআইডি সাইবার সেন্টারের সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখানে বেশ কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে।
১৮৬৭ সালের আইনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। ১৫৮ বছরের এই পুরোনো আইনে সকালে আটক করলে বিকালে জামিন পেয়ে যায় আসামি। জুয়াতে যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা খুবই সামান্য। চলমান আইনে জুয়া খেললে ২০০ টাকা জরিমানা আর দুই মাসের জেলের বিধান রয়েছে। আমরা ৩০ ধারায় বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনে মামলা নিতে পারতাম। বর্তমানে এই আইনে মামলা নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এখানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। জুয়া ও অনলাইন বেটিং ঠেকাতে সময়োপযোগী আইন দরকার। ১৫৮ বছর আগের জরিমানা ২০০ টাকা আর ২০২৫ সালে এসেও ২০০ টাকাই রয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের জুয়াড়িদের মধ্যে উঠতি বয়সি তরুণরাই বেশি। এ ছাড়াও মধ্যবয়স্ক থেকে বৃদ্ধ, শিক্ষিত-নিরক্ষর সবাই জড়িয়েছেন অনলাইন জুয়ার জালে।
ভুক্তভোগীরা সর্বস্বান্ত হলেও জুয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন এলাকার আয়োজক চক্রগুলো। গুলিস্তান, মতিঝিল, নিকেতন, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক, নিকুঞ্জ, উত্তরা, রূপনগর, খিলগাঁও, লালবাগ, হাজারীবাগ, বাড্ডায় বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যেই দেখা যায় জুয়ার আসর। এসব আসরে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, ছিঁচকে চোর, পকেটমার, মলমপার্টির সদস্য এমন কি দিনমজুররাও অংশ নেয়। ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, চরকি রেমিসহ নানা নামের জুয়ার লোভ সামলাতে না পেরে অনেকেই পথে বসছেন। এতে পারিবারিক অশান্তিসহ সামাজিক নানা অসঙ্গতি বাড়ছে।