বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে যে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ এবং অর্থনীতির জন্য এক সুসংবাদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন মোট ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। এ প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতিবিদরা দেখছেন বহুমাত্রিক নীতিগত সিদ্ধান্ত ও কার্যকর বাস্তবায়নের ফল হিসেবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন মাসেই দেশে এসেছে ২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের বছরের জুনে এ অঙ্ক ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ মাসওয়ারি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশ, যা ধারাবাহিক ইতিবাচক প্রবণতারই ইঙ্গিত দেয়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, গত ৩০ জুন একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১১ কোটি ৩ লাখ ডলার, যা বছরের শেষ দিনে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আস্থা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রমাণ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বেশ কিছু সুপরিকল্পিত সরকারি ও আর্থিক নীতিগত পদক্ষেপ।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : প্রবাসী আয়ে সরকার ঘোষিত ২.৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সময়োপযোগী কার্যকারিতা, অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও ডিজিটাল লেনদেনের উৎসাহ, প্রবাসী কর্মীদের দেশে আয় পাঠাতে উৎসাহ দিতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে একটি কার্যকর প্রযুক্তিভিত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে, যাতে লেনদেনের স্বচ্ছতা ও গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহে এ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে। ‘রেমিট্যান্স প্রবাহে এ ঊর্ধ্বগতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এটি শুধু রিজার্ভ বাড়াবে না, বরং টাকা-ডলারের বিনিময় হারের ওপরও নিয়ন্ত্রণ আনবে।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখা যায়, তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৩৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে এ ইতিবাচক প্রবণতা টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরি : হুন্ডি চ্যানেল পুনরায় নিষ্ক্রিয় করা, বিদেশে নতুন কর্মসংস্থানের সীমাবদ্ধতা, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রার ওঠানামা এবং কর্মসংস্থান প্রদানকারী দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা ভবিষ্যতের রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর যে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং কার্যকর নীতিমালার প্রতিফলন। ভবিষ্যতেও এ ধারা বজায় রাখতে হলে প্রবাসীদের আস্থা ধরে রাখা এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলকে আরও সহজ, দ্রুত ও লাভজনক করে তুলতে হবে।