কোনো সুদ নেই, নেই কোনো সার্ভিস চার্জ বা জামানতের বাধ্যবাধকতা। দুই দশক ধরে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের এ মানবিক উদ্যোগে ভাগ্য বদলেছে হাজারো সুবিধাবঞ্চিত মানুষের। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সহজ শর্তের এ ঋণ প্রকল্পে এরই মধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর এবং কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ২৯ হাজার ১১৮ পরিবার। গতকাল জগন্নাথপুর আধুনিক অডিটোরিয়ামে বাঞ্ছারামপুরের ৪১৭ নারীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ৭০ লাখ টাকার ঋণ। এ নিয়ে ৭৮তম বারের মতো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ও ট্রেজারার ময়নাল হোসেন চৌধুরী এবং বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম নাসিমুল হাই। এ ঋণকার্যক্রমে গতকাল প্রথমবারের মতো ঋণ পেয়েছেন ৯৭ জন, দ্বিতীয়বারের মতো ৭১ জন, তৃতীয়বারের মতো ২৪৯ জন। বাঞ্ছারামপুরের এ ৪১৭ নারী, যাঁদের প্রত্যেকের কাঁধে রয়েছে একটি করে পরিবারের দায়িত্ব। নিজেদের পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেন তাঁরা, কিন্তু দারিদ্র্য ছিল সেই স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। ঠিক তখনই তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ পরিচালিত বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন।
এ নারীদের অনেকেই অতীতে বিভিন্ন সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তাই বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এ সুদ ও সার্ভিস চার্জবিহীন ঋণ তাঁদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। অনুষ্ঠানে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আজ তৃতীয় বারের মতো ঋণ নিতে এসেছেন ২৪৯ জন। সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছর ধরে আপনারা আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। এর মধ্যে প্রায় সবাই নানান কাজে এ টাকা ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমরা চাই যাঁরা ঋণ নিচ্ছেন তাঁরা এ টাকার সঠিক ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হবেন। আপনারা স্বাবলম্বী হলেই আমরা সার্থক। এমনভাবে নিজেদের গঠন করবেন যেন আর কখনো ঋণ নিতে না হয়। যারা আজ প্রথমবারের মতো ঋণ নিচ্ছেন, আপনারা আমাদের আইনগুলো মেনে চলবেন। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে এ টাকা কেউ অন্যায় কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। নিজে কষ্ট করে আয় করবেন, স্বাবলম্বী হবেন। মাদকসংশ্লিষ্ট কোনো কাজে ব্যবহার করবেন না। এই যে এতগুলো বছর ধরে আমরা ঋণ বিতরণ করছি, আমাদের আদায়ের হার শতভাগ।’
এম নাসিমুল হাই বলেন, ‘এলাকার সবার সহযোগিতায় আমরা ৭৮তম বারের মতো ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করতে এসেছি। বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যানের সহায়তায় আজ থেকে ২০ বছর আগে এ কর্মসূচি চালু হয়েছে। এটা একটা মডেল কর্মসূচি। এর মাধ্যমে আপনারা স্বাবলম্বী হবেন। আপনাদের দেখে অন্যরাও নিজেদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করবে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আপনারা ঋণ গ্রহণ করছেন আপনাদের সেই উদ্দেশ্য যেন সফল হয়। ২০০৫ সাল থেকে পরিচালিত সুদমুক্ত জামানতবিহীন এ ঋণ প্রকল্পে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরই নয়, নবীনগর ও কুমিল্লার হোমনারও হাজার হাজার পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। সুদ-সার্ভিস চার্জমুক্ত ও জামানতবিহীন এ ধরনের ঋণ দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’
ক্ষুদ্র ঋণ পেয়ে বাহেরচরের নাজমা বেগম বলেন, ‘আমি এ ঋণ নিয়ে অনেক উপকার পেয়েছি। পাঁচ মেয়েকে আইএ পাস করিয়েছি। সেলাই মেশিন কিনেছি আগেরবার। সেলাই কাজ করে মেয়েদের পড়িয়েছি। টাকা জমিয়েছি। এবার টাকা নিয়ে ছেলের পাসপোর্ট করাব। ছেলেকে বিদেশে পাঠাব। আমার যে বসুন্ধরার ঋণ নিয়া কত্ত উপকার হইছে বলে বোঝাতে পারব না।’