দুর্ঘটনায় এক পা হারানো মাসদার আলী (৫০) রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। প্রায় ১০ মাস আগে এ ওয়ার্ডের সবার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে জমা নেওয়া হয়। তখন থেকে টিসিবির পণ্য দেওয়া বন্ধ। নতুন তালিকা করতে গত বছরের শেষদিকে জামায়াত-বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কমিটি করে দেয় সিটি করপোরেশন। তারা ইতোমধ্যে তালিকা করেছেন এবং কিছু মানুষকে ডেকে কার্ডও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কার্ড পাননি মাসদারের মতো আগের কার্ডধারী অনেক দুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং দিনমজুর।
মাসদার বলেন, সবাই ভালোবেসে সাহায্য করে। এবার টিসিবির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে তা কল্পনাও করিনি।
বিধবা নিলুফা বিবিরও (৬৫) কার্ড ছিল। এবার তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তার অভিযোগ, স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। যাদের সচ্ছলতা আছে, দলীয় বিবেচনায় তাদেরও কার্ড দেওয়া হয়েছে।
নতুন তালিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতারাও। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সালমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেন স্বপন গত ৮ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে ২৫ জুন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ।
সালমগীর বলেন, নতুন তালিকা করেছে। এতে অনেক গরিব, দুস্থ, বিধবা ও প্রতিবন্ধী বাদ পড়েছেন। আমরা চাই যারা টিসিবি কার্ড পাওয়ার যোগ্য, তারাই যেন পান।
জানা গেছে, আওয়ামী সরকারের পতনের পর স্থানীয় জামায়াত ও বিএনপির কয়েকজন নেতা ওয়ার্ডের টিসিবি কার্ড বাতিলের দাবি তোলেন। এ নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর রাসিকে সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন গবেষণা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান একটি কমিটি গঠন করে দেন নতুন তালিকা করার জন্য। ছয় সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় নগর বিএনপির সাবেক সদস্য তাজ উদ্দিনকে। সদস্য ছিলেন ওয়ার্ড জামায়াতের আমির মনিরুজ্জামান সেন্টু। এ কমিটি নতুন তালিকা করেছে।
কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান সেন্টু বলেন, ওয়ার্ডে কার্ড আছে আড়াই হাজারের মতো। সম্প্রতি আমরা অল্প কিছু কার্ড দিয়েছি। এর মধ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। তাই কার্ড বিতরণ বন্ধ। যোগ্যদেরই কার্ড দিচ্ছি। তারপরও কেউ যদি বাদ পড়ে, আমরা সেটা নেব বলেছি।
কমিটির আহ্বায়ক তাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের ঠিকমতো তালিকা করতে দেওয়া হচ্ছে না। আগের লোকজনই যদি থাকবে, তাহলে কমিটির কী দরকার? সেজন্য আমি কোনোকিছুই আর দেখছি না।
রাসিকের ওয়ার্ড কার্যালয়ের সচিব শামসুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের পর কার্ড বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে। আমরাও চাই প্রকৃত দুস্থরাই যেন কার্ড পান।