রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের নওদাপাড়া থেকে সিটি হাট পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফেলা হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অপরিশোধিত কঠিন বর্জ্য। রাস্তার দুই পাশে স্তূপাকারে ছড়িয়ে থাকা এই আবর্জনা এখন পুরো এলাকাটিকে এক বিষাক্ত ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে। এর ফলে রাস্তার পাশের গাছপালা মারা যাচ্ছে, বাতাস ও মাটি দূষিত হচ্ছে, চারদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ ও নানান স্বাস্থ্যঝুঁকি। সিটি করপোরেশনের এসব ময়লার কারণে এরই মধ্যে অন্তত ১২টি গাছ মারা গেছে। এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে ৯টি গাছ। রাজশাহী সিটি করপোরেশন তথ্য মতে, রাজশাহী শহরে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব ময়লা ফেলার জন্য নগরীর নওদাপাড়ায় রাসিকের ভাগাড়টি ২০০৪ সালে চালু হয়েছিল। দুই দশকের ব্যবহারে এটি এখন ধারণক্ষমতার অনেক বাইরে চলে গেছে। ফলে শহরের মোট বর্জ্যরে এক-চতুর্থাংশ কোনোভাবেই সংগ্রহ হয় না, পড়ে থাকে খোলা জায়গায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহী নগরীর আম চত্বর মোড় থেকে একটু এগোলেই শহরের দুই ধারে ফেলা হচ্ছে ময়লা। প্রধান সড়কের দুই পাশে উঁচু করে পড়ে থাকা এসব ময়লা দেখে মনে হচ্ছে কোনো ভাগাড়। দুই পাশেই ময়লা জমে সড়ক যেন পরিণত হয়েছে ময়লার পাহাড়ে। এক সময় ময়লার পাশেই ছিল বড় বড় গাছ। এই গাছগুলো ময়লার কারণেই মারা গেছে। কোনো কোনোটি দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটিও মারা গেছে। আবার কোনো কোনোটি কেটে ফেলা হয়েছে। মহাসড়কের পাশে দেখা গেছে প্লাস্টিক, পলিথিন, গৃহস্থালির বর্জ্য, এমনকি হাসপাতালের বর্জ্যও স্তূপাকারে ফেলা হয়েছে। মাটির রং কালচে হয়ে গেছে, বড় গাছের শিকড় আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে পচে গেছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান সংরক্ষণ কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, ‘আমরা সাধারণত মহাসড়কের ধারে বর্জ্য ফেলি না। কিন্তু বর্ষার দিনে ভাগাড় উপচে পড়লে ট্রাক ঢোকানো যায় না, তখন সাময়িকভাবে রাস্তার পাশে ফেলতে হয়।’ পরিবেশবিদদের অভিযোগ, নতুন ভাগাড়ের অজুহাতে সিটি করপোরেশন বছরের পর বছর একই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, অপরিশোধিত বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিক ও চিকিৎসা বর্জ্য, মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলের জন্য মারাত্মক হুমকি। এগুলো থেকে নির্গত ভারী ধাতু ও বিষাক্ত পদার্থ গাছ মেরে ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কবির হোসেন জানান, গত বছর তারা সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে মহাসড়কের ধারে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে বলেছিলেন। পরে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার ফেলা শুরু হয়েছে।