দেশে সর্বপ্রথম করোনা ধরা পড়েছে নারায়ণগঞ্জে। এ নিয়ে পুরো নগরজুড়ে চলছে করোনা আতঙ্ক। শহরের প্রত্যেকটি মার্কেটে কমেছে মানুষের আনোগোনা। স্কুল ও কলেজগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি। এমনকি করনো আতঙ্কে পিছিয়ে গেছে বিয়ের অনুষ্ঠানও।
জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় নারায়ণগঞ্জের এক দম্পতি। এরপরেই তাদেরকে কেন্দ্র করে ওই দম্পত্তির সাথে কারা কোথায় কথন দেখা করেছেন বা কথা বলেছেন এই সন্দেহে আরও পাঁচজনকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এমনকি ওই দম্পতি সম্প্রতি আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেই হাসপাতালে আতঙ্কে কমে গেছে রোগীর উপস্থিতি।
এছাড়া এই আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে শহরের মোড়ে মোড়ে হঠাৎ করেই মাস্ক বিক্রি শুরু হওয়ায়। নগরজুড়ে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়েছে। বেশিরভাগ নাগরিক মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে ২০ টাকার মাস্ক বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। এ নিয়ে শহরের একটি ফার্মেসিকে জরিমানাও গুণতে হয়েছে। মাস্ক বিক্রি যেন আতঙ্কের নগরী নারায়ণগঞ্জকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছে। আতঙ্কের প্রভাব পড়েছে স্কুল কলেজেও। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
আরিফুর রহমান নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, আমার মধ্যে কোন আতঙ্ক নেই। তবে বাবা-মা কলেজে যেতে বারণ করছেন। এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ রুমন রেজা জানান, আমাদের এখানে কোন আতঙ্ক নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে সচেতনতা প্রয়োজন। অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে শহরের বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে অনুষ্ঠানের চাপ কমতে শুরু করেছে। তবে কোন কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলতে রাজি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কমিউনিটি সেন্টারের মালিক জানান, এ বিষয়ে যদি আমরাই কথা বলি আতঙ্ক আরও বেড়ে যাবে। হাজী মহিউদ্দিন ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার মেয়ের বিয়ে প্রায় পাকাপাকি। চলতি মাসের শেষের দিকে বিয়ের অনুষ্ঠান। মেয়েকে অনুষ্ঠান করে বরের বাড়িতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্ত করোনা আতঙ্কে আত্মীয়-স্বজন শুভাকাঙ্খীরা সকলেই পরামর্শ দিয়েছেন আতঙ্ক কমলে অনুষ্ঠান করতে।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদ জানিয়েছেন, করোনা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের আরও পাঁচজনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ পেলে তারা ফিরে যাবেন। যে পাঁচজন কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। যাতে কোনোভাবে আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য এই গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে ঢাকায় কতজন কোয়ারেন্টাইনে পর্যবেক্ষণে রয়েছেন, সেটি আমার জানা নেই। শুধু স্থানীয় পর্যায়ের হিসাবটা আমার কাছে রয়েছে। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
এর আগে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার (০৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জে জেলা মাল্টিসেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিনকে সভাপতি এবং জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহম্মেদকে সদস্য সচিব করে এ কমিটি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন।
তিনি আরও জানান, করোনা আক্রান্ত কিংবা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় নির্মিত জুডিসিয়াল ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার দুটি ফ্লোর নিয়ে পঞ্চাশ শয্যাবিশিষ্ট কোয়ারেন্টাইন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর তিনশ’ শয্যার হাসপাতালে ৫টি ও ভিক্টোরিয়া ১০০ শয্যা হাসপাতালে ৫ টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখান থেকে সন্দেভাজন রোগীদের রেখে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, কারো মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ দেখা গেলে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন বেডে রাখা হবে। আর সন্দেহজনক কাউকে পাওয়া গেলে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। এজন্য একটি সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকাল ৪ টায় নারায়ণগঞ্জে করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি জানান, এখন নারায়ণগঞ্জে তেমন কোন আতঙ্ক নেই। রোগী নির্ণয় বা সন্দেহে কে কোন জেলার এ বিষয়ে আমাদেরকে বিস্তারিত তথ্য দেয়া হয় না। শুধু কে পজিটিভি অর্থ্যাৎ আক্রান্ত হলে আামরা জানতে পারি। তবে নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে ছয়জন কোয়ারাইন্টানে আছেন। তাদের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চলছে। তিনি আরও জানান, নারায়ণগঞ্জবাসীকে আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক