সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন গেট ভেঞ্চারের কাছ থেকে বিনিয়োগ হিসেবে ১৫ মিলিয়ন ইউএসডি অর্থায়ন পেয়েছে বাংলাদেশের অনলাইন রাইড শেয়ারিং ও টিকেটিং প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান সহজ। নতুন এই মূলধন নিজেদের গ্রাহক অর্জন ও রাইড শেয়ারিং ব্যবসার বিস্তৃতিতে কাজে লাগাবে সহজ।
রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সহজ গণমাধ্যমের কাছে তাদের নতুন বিনিয়োগকারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়, একই সঙ্গে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে গাড়ি সেবা চালু করারও ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
দৈনন্দিন যাতায়াতে রাজধানী ঢাকার যানজট থেকে মুক্তি পেতে গ্রাহকদের জন্য অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি ও মোটরবাইক বুকিং রাইড শেয়ারিং-এর সেবা দিচ্ছে সহজ। পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস, ফেরির টিকিট থেকে শুরু করে সিনেমার টিকিটও বুকিং দেয়া যাচ্ছে সহজের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপে।
কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই একই অ্যাপে গ্রাহকদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সেবা প্রদান করাই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস, বাস ও সিনেমার টিকিটসহ সকল সুবিধা স্মার্টফোনের 'সুপার অ্যাপ'-এর মাধ্যমে ডিজাইন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সহজ।
এ প্রসঙ্গে সহজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির বলেন, আমাদের স্লোগান হচ্ছে 'জীবনটাকে সহজ করুন'। ২০১৪ সালে আমরা যখন যাত্রা শুরু করেছিলাম আমাদের লক্ষ্যই ছিল গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদান করা। ২০১৪-তে আমরা টিকিট সেবা ও এ বছর আমরা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নিয়ে এসেছি, এবার আমরা আকর্ষণীয় 'সুপার অ্যাপ' পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহজ দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের সমর্থন পাচ্ছে এবং আমি মনে করি এটি খুব শিগগিরই আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
'বাংলাদেশের গ্রাহক সেবা ও পরিবহন খাতে যুগান্তকারী প্ল্যাটফর্মের অংশ হিসেবে মালিহা ও তার দলে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমরা সত্যিই সম্মানিত'- বলেন গোল্ডেন গেট ভেঞ্চার-এর অংশীদার জাস্টিন হল।
'উন্নয়নের রূপরেখায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা বেশ প্রসারিত। শহুরে জনসংখ্যার ঘনত্বের তুলনায় এখানকার গ্রাহক সেবায় ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি, গ্রাহকদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। গ্রাহকের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমি মনে করি সহজ-এর ব্যবসা প্রসারের পরিকল্পনা সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হিসেবেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে।'
সহজকে উদ্দেশ্য করে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সহজ-এর সৃজনশীল উদ্যোগগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। প্রযুক্তি খাতে দেশের স্টার্ট-আপ দৃশ্য যখম ক্রমবর্ধমান হারে উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখন এই বিনিয়োগ ১৬ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থান পরিবর্তনে সহায়তা করবে। আমি মনে করি, এটি আমাদের দেশের প্রযুক্তিগত ইকোসিস্টেমে একটি উল্লেযোগ্য ধাপ বলেই বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, 'বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের হার গত তিন বছরে তিনগুণ বেড়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটাই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। আমরা আমাদের নতুন বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাই এবং মালিহা ও তার দলের সাফল্য কামনা করছি।'
দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের ঠিক সন্ধিঃক্ষণেই এই বিনিয়োগের আগমন। গত ২০ বছর যাবত বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ৭% অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে এবং শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বর্তমানে ‘সহজ’-এ প্রযুক্তি, পরিচালনা ও বিপণনে ২০০-এর বেশি অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কর্মরত আছেন।
বিডি প্রতিদিন/৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮/আরাফাত