২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ১৬:০০

সৌন্দর্যের জগতে ফারহানা চৈতি'র বাধাহীন পথ চলা

অনলাইন ডেস্ক

সৌন্দর্যের জগতে ফারহানা চৈতি'র বাধাহীন পথ চলা

২০১০ সালের শুরু থেকে মেকাপের ধরনে এসেছে বেশ পরিবর্তন। দক্ষ মেকাপ আর্টিস্টদের ভিডিও দেখে দেখেই তো মেকাপের হাতে খড়ি তরুণীদের। তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করেই তো মেকাপে পটু হয়ে ওঠা। কিন্তু এই মেকাপ এক্সপার্ট বা আর্টিস্টদের সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি আমরা। 

কৌতূহল তো থেকেই যায়। এই কৌতূহল কমাতে আমরা আজকে জানবো একজন মেকাপ এক্সপার্টের কথা। মেকাপপ্রেমী বন্ধুদের জন্য তিনি নিজের ভালো লাগা এবং স্বপ্ন সম্পর্কে বলেছেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন দারুণ কিছু টিপসও।

প্রথমে জেনে নিই ফারহানা চৈতি সম্পর্কে। ফারহানা চৈতি একজন সার্টিফাইড বিউটি এক্সপার্ট এবং ভিন্নধর্মী মেকাপ আর্টিস্ট। তার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বাংলাদেশেই। ফারহানা চৈতির প্যাশন হচ্ছে মেকাপ। মেকাপপ্রেমী ফারহানা চৈতি মেকাপের উপর তার দক্ষতা আরও পোক্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি ভিন্নধর্মী মেকাপের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে সিওলের এমবিসি বিউটি একাডেমি থেকে ১ বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করেন। ফ্যাশন এবং স্টাইলের ব্যাপারে সবসময়ই তার আলাদা অনুভূতি ছিল। তিনি তার স্বামীর কাজের সুবাদে কোরিয়া গিয়েছিলেন এবং সেখানেই তিনি মেকাপের জগতে প্রবেশের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। 

আপনারা জানেন, সিউলকে এশিয়ার ফ্যাশন, মেকআপ এবং স্টাইলের শীর্ষস্থানীয় প্রাণকেন্দ্র বলা হয়। মেকআপে আন্তর্জাতিক একাডেমিক এবং পেশাদার শিক্ষাগ্রহণের অভিজ্ঞতার সাথে তিনি বিশ্বাস করেন যে, একই সাথে পেশাদারিত্ব, উন্নত প্রযুক্তি, সৃজনশীলতার প্রয়োগের মাধ্যমে মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে ভালো ভিত্তি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্য শিল্পে অবদান রাখার মতো আরও অনেক কিছুই রয়েছে। ফারহানা চৈতি এখন বাংলাদেশে আছেন এবং তার মূল উদ্দেশ্য হলো তার জ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মেকাপে উৎসাহীদের মধ্যে সঠিক দক্ষতা এবং মানসিকতা তৈরি করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্য শিল্পের বিকাশে সহায়তা করা এবং বাংলাদেশের মেকাপের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

তিনি আরও বলেন, সিওলে এমবিসি বিউটি একাডেমিতে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছি যে মেকআপ মানুষের আবেগ, কৌতূহল এবং মনোভাব দ্বারা পরিচালিত শিল্প এবং বিজ্ঞানের ফিউশন। আমি কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় পেশাদার মেকাপ আর্টিস্টদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে এই কাজের সূক্ষ্মতা, ব্যাপকতা এবং ন্যাচারাল মেকআপের উপর দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি। তখন থেকেই মনে হলো মেকাপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে করে এই আবিষ্কারের সাথেই থাকতে পারি সব সময়।

নিজেই নিজের মেকাপ করা আর অন্যের মেকাপ করিয়ে দেওয়া দুটো এক নয়। অন্যকে মেকাপ করিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন। আর তার কারণ হলো মানুষের চেহারার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য। অন্যকে মেকাপ করিয়ে দেওয়ার আগে হাইজিন, ত্বকের ধরণ এবং স্কিন ইস্যু, কোন ত্বকের জন্য কোন ধরনের মেকাপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে এবং কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন। আর অবশ্যই মেকাপটাকে পেশা হিসেবে নিতে হবে ভালোবেসে, অন্য কিছুর জন্য নয়। 

তিনি বলেন, ফারহানা চৈতি'স মেকওভার ফিনেস (FARHANA CHAITY’S MAKEOVER FINESSE) নামে তিনি তার নিজস্ব মেকাপ স্টুডিও দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস, মনোভাব এবং নিজেকে ভালবাসার মাধ্যমে শুরু হয়।

মেকাপের আন্তর্জাতিক বাজার খুবই পেশাদার এবং সেখানে প্রতিনয়ত অনেক আধুনিক প্রযুক্তি, কৌশল এবং সৃজনশীলতার ব্যবহার হওয়ার থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বাংলাদেশের বেশ কিছু মেকাপ আর্টিস্টদের হাত ধরে বাংলাদেশের সৌন্দর্য ও মেকআপ ইন্ডাস্ট্রি উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি অর্জন করেছে। সামনের দিনগুলিতে এই শিল্প আরও উন্নতি করবে তা আশা করে যায়। 

তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির সৌন্দর্য তার আত্মবিশ্বাস এবং পজেটিভ মনোভাব দিয়ে শুরু হয়। আবেগ, পরিপূর্ণতা এবং সৃজনশীলতার সাথে চেহারাটিকে ফুটিয়ে তোলাই মেকআপ শিল্পীর কাজ।

তিনি বিদেশে থাকার সময় বাংলাদেশের ফ্যাশন এবং সৌন্দর্য শিল্পের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি বিশেষ দিবসে ডেইলি স্টার-এর লাইফস্টাইল, প্রথম আলো’র নকশা এবং ২০১৮ এর ওয়ার্ল্ড কটন ডে ফ্যাশন শো ইত্যাদির সাথে কাজ করেছেন। ফারহানা চৈতি সিওলে থাকাকালীন গ্লোবাল বিউটি এক্সপো ২০১৭-তে অংশ নিয়ে বিয়ের মেকআপে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিউটি এক্সপোতে অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন হেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’সহ কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের শীর্ষস্থানীয় বারটি দেশের হেয়ারস্টাইলিস্টরা। 

তিনি বলেন, এটি আমার জন্য অবাক করা এবং খুবই উপকারী অভিজ্ঞতা ছিল।

সুবিশাল অভিজ্ঞতা, কাজের প্রতি আবেগ এবং স্টাইল সেন্সের কারণে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই মাইকেল পোহ তার কাছে অনুপ্রেরণা। মাইকেল পোহ এশিয়ার একজন বিখ্যাত হেয়ার স্টাইলিস্ট এবং মালয়েশিয়ার হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন, ফারহানা চৈতি নিয়মিত ফেমিনাইন ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রো টিভি এবং প্রবাসী বাঙালিদের কমিউনিটি কুয়ালালামপুর-এর মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসেবে পার্টি মেকআপ, বিয়ের মেকআপ থেকে থিম মেকআপ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের মেকআপের উপর কাজ করেছেন।

একজন মেকআপ আর্টিস্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তার ক্লায়েন্ট কী চায় এবং তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। অনুষ্ঠানের ড্রেসআপ এবং ক্লায়েন্টের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করেই মেকাপ আর্টিস্ট খুব সহজেই জানেন যে কী ধরনের চেহারাটি এই ক্লায়েন্টটির জন্য উপযুক্ত। যদিও ক্লায়েন্টেরও কিছু নির্দিষ্ট চাওয়া থাকে। সেই চাওয়াগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ক্লায়েন্টের পছন্দমত লুক দেওয়াটাই একজন মেকাপ আর্টিস্টের প্রধান কাজ।

তার মতে, সকলেরই তার ত্বক ও ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেকাপের পণ্য বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। ত্বকে কি ধরনের পণ্য স্যুট করে সে সম্পর্কে কিছুটা হোমওয়ার্ক করে নেওয়া ভালো। বিউটি এক্সপার্টদের সাথে পরামর্শের পাশাপাশি ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং মেকাপ সংক্রান্ত ব্লগগুলো পড়া সবসময় সহায়তা করে সঠিক পণ্য বাছাই করতে। ভাল পণ্যগুলি কিছুটা বেশি দামি হলেও সেগুলোই বাছাই করে ব্যবহার করাই ভালো। 

তিনি বলেন, তিনি যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ট্রেন্ড অনুযায়ী মেকআপ এবং নতুন নতুন ফিউশনের মাধ্যমে ন্যাচারাল মেকআপ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে সেই প্রবণতা সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ফেসবুকের মাধ্যমে ফারহানা চৈতি সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন 'ফারহানা চৈতি'স মেকওভার ফাইনেসেস'-এর ফেসবুক প্রোফাইল: https://bit.ly/2U1VXa2।

 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর