আমরা এমন পর্যায়ে আছি যেখানে সবকিছুই সত্য, আবার সবকিছুই মিথ্যা। ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়ে গেল তাকে সংবিধান, আইন-কানুনের দিক দিয়ে অগ্রহণযোগ্য বলা যাবে না। আবার এতে গণতন্ত্র প্রতিফলিত হয়েছে তাও বলা যাবে না। যেদিকে কথা বলবেন সেদিকেই কিছু যুক্তি দাঁড় করানো সম্ভব। সোমবার বাংলাভিশনের টকশো 'ফ্রন্ট লাইন'-এ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এ কথা বলেন। মতিউর রহমান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন।
ড. আকবর আলি খান বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ অনেক দলই অংশ নেয়নি। ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়। বাকি ১৪৭টি আসনে তিন-চারটি দলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হলো। প্রত্যাশিত ফলাফলের ব্যতিক্রম বড়জোর গোটা দশেক আসনে হয়েছে। ৯৫ শতাংশ ফলাফল আগেই নির্ধারিত ছিল। এদিক থেকে দেখতে গেলে সবই ছক বাঁধা অবস্থায় হয়েছে। সবই সংবিধানে যেভাবে আছে, নির্বাচন কমিশনের আইন-কানুনে যেভাবে আছে সেভাবেই হয়েছে। আরেক দিক দিয়ে দেখলে প্রশ্ন ওঠে গণতন্ত্রের বিধান কি জন্য? একটা রাজনৈতিক দল পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার পর তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা কোনোটাই এখানে প্রতিফলিত হলো না। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হয়ে যাওয়ায় ৫০ শতাংশ ভোটার তো ভোটই দিতে পারলেন না। বলা হচ্ছে, ১৪৭ আসনে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে গিয়েছিল। তাও যদি হয়, সেক্ষেত্রে মোট ভোটারের শতকরা ২০ ভাগ ভোট দিতে গিয়েছে, বাকি ৮০ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে যাননি। এটা তো বলতে গেলে শুধু কাগজের নির্বাচন হয়েছে। গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে ধরনের নির্বাচন দরকার তা আমরা পেয়েছি বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। দেশ শাসনের ক্ষেত্রে সরকারি দলের সাফল্য-ব্যর্থতার কোনো বিতর্ক হলো না। দেশের ভেতরে এবং বাইরে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠছে। এ নির্বাচনে কী লাভ হবে? দর্শকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে শুধু মনে করছি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হলেই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। সেটি কিন্তু হচ্ছে না। আমাদের সংবিধানের মধ্যে এমন অনেকগুলো বিধান আছে যার ফলে যে কোনো দল ক্ষমতায় গেলে স্বেচ্ছাচারিতায় চলে যায়। আজ আমরা বর্তমান সরকারকে দোষ দিচ্ছি এমন একটা নির্বাচন করার জন্য। কিন্তু এর আগে অন্য দলীয় সরকার যারা ছিল তারাও কিন্তু একই পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যার জন্য আমি আমার আরও তিনজন সহকর্মীসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। এটা নিয়ে সব মহলের আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে স্থায়ী একটা সমাধানে না গেলে প্রতি নির্বাচনের আগেই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে।
'বাংলাদেশ কারও কাছে হাত পাতবে না'- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশ আদৌ কোনো বৈদেশিক সাহায্য নেবে না সে ধরনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার মতো কোনো অগ্রগতি আমাদের অর্থনীতিতে এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। এখনো তো সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে। যেটা হয়েছে বলা যায়- বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।