মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

দিনাজপুরে বাল্যবিয়ের হিড়িক

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে বাল্যবিয়ের হিড়িক

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে করোনাকালীন উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় চিরিরবন্দরে ৫ শতাধিক বাল্যবিয়ে হয়েছে। শুধুমাত্র বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েই ২০ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। পারিবরিক সহিংসতা প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে, যৌতুক প্রতিরোধ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, ধর্ষণসহ হত্যা, জখম, অপহরণ ও উক্ত্যক্তকরণ বন্ধে বিভিন্ন সরকারি দফতর, এনজিও, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বেলতলী সংগীত একাডেমী ও বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সংগঠন উঠান বৈঠক, র‌্যালি, মানববন্ধন, সেমিনার, আলোচনা ও মতবিনিময় সভা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, মা সমাবেশ, ভিডিও প্রদর্শন ও সংবাদ সম্মেলন করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করলেও দারিদ্র্যতা, অশিক্ষা, মোবাইলের অপ-ব্যবহার, বাল্যপ্রেমে জড়িয়ে পড়া, পিতামাতার বোঝা মনে করা, পরীক্ষায় ফেল করা, অনৈতিক সম্পর্ক ও কুসংস্কারের কারণে বাল্যবিয়ে কৌশল পাল্টে হচ্ছে এবং নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। করোনাকালীন সময়ে সব ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা প্রয়োজন বলে অনেকেই জানান। উপজেলা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সদস্য মোর্শেদুর রহমান জানায়, অসচেতনতা, অশিক্ষিত দারিদ্র্য, কুসংস্কার, সামাজিক সুনাম ক্ষুণœœ, নিরাপদ বাসস্থান ও পরিবেশ এবং অস্বচ্ছলতার কারণে গ্রামসহ মফস্বল শহর এলাকায় ১৩-১৭ বছর বয়সের শিশু কিশোরীরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন। আইন থাকলেও প্রয়োগে ঘাটতি থাকায় এসব শিশু কিশোরীদের জোর করে বিয়েতে রাজি করিয়ে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরামর্শে অন্যত্র গিয়ে গোপনে আরবি জানা লোকদের দিয়ে বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। বয়স কম হওয়ায় কাজিরা বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন না করায় ওই কিশোরীটি আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পারায় কিছুদিন যেতে না যেতেই মানসিক,শারীরিক, যৌন নির্যাতন, যৌতুকের চাপের ফলে ছাড়াছড়ি হয়ে যাচ্ছে অনেক বিয়ে। অনেক ক্ষেত্রে একটি সন্তান হওয়ার পর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে যাওয়ার স্বামীর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হচ্ছেন। সামাজিক সুনাম নষ্টের ভয়ে অনেকেই নির্যাতনের কথা গোপন রাখছেন।

বাল্যবিয়ে ও পারিবারিক সহিংসতা বন্ধে সুনিদ্রিষ্ট আইনি-বিধান থাকলেও অসচেতনতা, মামলার দীর্ঘসুত্রিতা, দোষী ব্যক্তির লঘু শাস্তি, আশ্রয় বা নিরাপদ বাসস্থানের অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক অসহযোগিতা থাকায় মামলা নিতে টাকার চাপ, মামলার তদন্ত খরচ মেটানো, ঠিকমতো বিচার না পেয়ে হতাশ হয়ে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। নশরতপুর রহমানিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানায়, করোনাকালীন সময়ে ৮-১০ জনের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ঝড়ে পড়ার সংখ্যা বাড়তে পারে। চিরিরবন্দর উপজেলার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও বেলতলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোর্শেদুর রহমান জানান, করোনার সময়ে এই স্কুলের ২০ ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। চিরিরবন্দর উপজেলায় ৩৯টি মাদ্রাসা, ৭৬টি স্কুল, ১২টি কলেজ এর প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ অবস্থা বিরাজ করছে। করোনার এ সময়ে পাঁচ শতাধিক বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

সর্বশেষ খবর