শনিবার, ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ধানের দাম নিয়ে হতাশ কৃষক

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

ধানের দাম নিয়ে হতাশ কৃষক

হাটবাজারে ধানের দাম ভালো, তবে লাভ নেই কৃষকের। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টির কারণে ধানের মান নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বোরো ধান বাজারে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে কৃষকের লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগকৃত আসল টাকাই উঠছে না। গত কয়েকদিন সরেজমিনে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার তেঁতুলতলা, হাটগোপালপুর, শৈলকূপার ভাটই বাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটজুড়ে শুধু ধান আর ধান। কৃষক তার নতুন ধান নিয়ে এসেছেন হাটে বিক্রি করতে। অধিকাংশদের মুখে হাসি নেই। হাট ঘুরে দেখা গেছে একই ধান বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। যেসব ধানের মান ভালো তা ১ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। আবার একই ধান যেগুলো বৃষ্টির কারণে একটু মান নষ্ট হয়েছে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা আর একেবারেই মান কম এমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিনিকেট হিসেবে পরিচিত সরু ধান  প্রতি মণ ১ হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার একই ধান যেগুলো বৃষ্টিতে কিছুটা রং নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ৪০০ থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা ছিল ব্রি-২৮ ধানের ক্ষেত্রেও। এ জাতের ধান ৮৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে নষ্ট অনেক নিম্নমানের ধান বিক্রিও করতে পারছেন না চাষিরা। ধান বিক্রি করতে আসা আতিয়ার জানান, সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার ভাটইহাটে ধান বিক্রি হয়। সপ্তাহ দুয়েক আগে হাটে নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে। তবে ক্রেতারা খুব হিসাব করে ধান কিনছেন। কারণ সম্প্রতি অশনির প্রভাব ও টানা বৃষ্টিতে খেতের ধান নষ্ট হওয়ার কারণে এ অবস্থা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যারা বৃষ্টির আগে ধান কেটে ঘরে তুলতে পেরেছেন তারা ধানের দাম বেশি পাচ্ছেন। আর আমাদের মতো যেসব চাষি আছেন যারা বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের কপাল পুড়েছে। সোমনাথ বিশ্বাস নামে আরেকজন ধান বিক্রেতা কৃষক জানান, দুই সপ্তাহ আগেও এ বাজারে ধান বিক্রির সময় ক্রেতাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি। বর্তমানে আমরা বাজারে ধান এনে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছি।

আড়তদার ও মিলাররা ধানের মান একটু নিম্ন হলেই তা আর নিতে চাচ্ছেন না। আর নিলেও তা কম দাম দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে ধানের দাম ভালো হলেও আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ বৃষ্টিতে ধান খেতে ডুবে রং নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ধান নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা কম দামে ধান কিনে নিচ্ছেন। আড়তদার রতন কুমার দে জানান, এবার ধান নিয়ে আমরা সত্যিই বড় সমস্যায় আছি। কারণ বাজারে ধানের মধ্যে কোনটি ভালো কোনটি খারাপ যাচাই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা মূলত ধান কিনে বিভিন্ন মিলে দিয়ে চাল তৈরি করি। ধানের মান যদি ভালো না হয় তাহলে চালের মানও কমে যায়। এসব কারণেই ধানের মান নির্ণয় করে কিনতে হচ্ছে আমাদের। এতে অনেক চাষি আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হলেও কিছু বলার থাকছে না। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আজগর আলী জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় ৮৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এ বছর উপযুক্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে শেষ সময়ে অশনির কারণে ধান নিয়ে কৃষকরা একটু বিপত্তিতে পড়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর