শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

বিপর্যয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

মারা পড়ছে প্রাণী ॥ নষ্ট হচ্ছে ডিম ও বাসা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

বিপর্যয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের একাংশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছের সংরক্ষিত বনের ১২৫০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এর অবস্থান। এই উদ্যানে রয়েছে সংকটাপন্ন প্রাণী উল্লুক। দুর্লভ প্রাণী চিতা বিড়াল ও সজারু। আছে প্রায় বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী গোল্ডেন ক্যাট, চশমা পরা বানর, বিপন্ন প্রাণী বনরুই ও বিরল প্রজাতির বৃক্ষ। গবেষকদের মতে, এই জাতীয় উদ্যান একটি সংবেদনশীল বন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর আজও এর সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। ভ্রমণের জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই বনে ঢুকছেন। এতে প্রাণীরা পাচ্ছে না নির্ঝঞ্জাট পরিবেশ। হুমকিতে পড়েছে বনের প্রাণীকুল। বিশেষজ্ঞরা এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা আর উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, এই বনে দর্শনার্থী প্রবেশে রাশ টানতে হবে। আর এটা করতে হবে এখনি। জানা যায়, ২০২০ সালে ১ লাখ ১০ হাজার ২৮০ জন দর্শনার্থী লউয়াছড়ায় প্রবেশ করেন। ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩০ জন আর ২০১৮ সালে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭১১ জন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, লাউয়াছড়া বনে তিনটি স্তর রয়েছে। মানুষের বিচরণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিচের স্তর বনতল। বনতলে তৃণ, গুল্ম, ঔষধি গাছ, শৈবাল, ছত্রাক এবং প্রচুর পরিমাণ অণুজীব, ব্যাঙ, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী মারা যাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে তাদের ডিম ও বাসা। সীমানা চিহ্নিত না থাকায় পুরো বন এলাকা দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। এ উদ্যানে রয়েছে কমপক্ষে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি। প্রায় প্রতিদিন বনের এসব প্রাণী বেরিয়ে আসে লোকালয়ে। এদের কিছু ধরা পড়ছে মানুষের হাতে, কিছু মারা যাচ্ছে গাড়িচাপায়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছর ২১৫টি জীবিত ও ১৩টি মৃত প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২০ সালে উদ্ধার করা হয় ২২৭টি জীবিত ও ১৮৮টি মৃত প্রাণী। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘সব বনেই ভিজিটর কেরিং কেপাসিটি আছে। এই বনে প্রতিদিন ৪০০ ও বিশেষ দিনে সর্বোচ্চ ১০০০ দর্শনার্থীর প্রবেশ করা উচিত।’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘একটি জাতীয় উদ্যানের পুরো আয়তনের ২০ শতাংশ ট্যুরিজমের জন্য ওপেন রাখা হয়। বাকি ৮০ শতাংশ থাকে রিজার্ভ। কিন্তু লাউয়াছড়া উদ্যানের পুরোটাজুড়েই ট্যুরিজম।’ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক আবদুল করিম কিম বলেন, ‘লাউয়াছড়া এখন লাভজনক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। যত বেশি মানুষ প্রবেশ করছে কর্তৃপক্ষের তত আয় হচ্ছে। পরিবেশের কথা কেউ ভাবছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর