শনিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাতক্ষীরায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

তীব্র শীতে সাতক্ষীরায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। প্রতিদিন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জ্বর, সর্দি, কাশি ও কোল্ড ডায়রিয়াসহ নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই অবস্থা সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, শিশু হাসপাতালসহ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে অন্তত ১২০০ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। সাতক্ষীরায় এক সপ্তাহে তাপমাত্রা নেমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আসার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলছেন, সকাল ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় কনকনে ঠান্ডার কারণে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে প্রতিটি হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বেড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি। বারান্দাতেও অতিরিক্ত বেড দিয়ে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যদিকে হাসপাতালে জনবল সংকট থাকায় অধিক রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের। জ্বর, সর্দি ও ডায়রিয়ায় ৭ জানুয়ারি থেকে চার বছরের তাওছিপকে নিয়ে ভর্তি আছেন সাতক্ষীরা বুধহাটা গ্রামের মা ফাতেমা খাতুন। তিনি বলেন, কনকনে শীতে তার ছেলের প্রথমে জ্বর ও সর্দি হয়। পরে ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পর এখন অনেকটা সুস্থ।

পাঁচ মাসের কন্যাসন্তান নিয়ে আসা তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের আবদুল্লাহ জানান, ৯ জানুয়ারি ভোরে তার মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে যান। রোগীর চাপে শয্যা খালি না থাকায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। প্রচ ঠান্ডার কারণে তার মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে। বুকে কফ জমার কারণে দিনে তিনবার নেবুলাইজার দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শামছুর রহমান জানান, বর্তমানে ৫৫ জন শিশু ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন প্রতিদিন গড়ে ৭৫ থেকে ৮০ জনের মতো রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে অন্তত ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি আরও জানান, কনকনে এ শীতে প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের ঘর থেকে বাইরে আনা যাবে না। সব সময় শরীরে গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে। তাহলে ঠান্ডাজনিত সব রোগ থেকে শিশু রক্ষা পাবে। সাতক্ষীরা ৩০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে ৩৭ জন শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাসপাতালের নার্সদের ইনচার্জ স্টাফ নার্স সেলিনা পারভীন জানান, জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেও শিশুরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। সব শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগ। বেড সংকটে অনেক সময় ফ্লোরে বিছানা করে রোগীকে চিকিৎসাসেবা নিতে হয়েছে। রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এ মুহূর্তে ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ মিলিয়ে ৩০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ঠান্ডাজনিত রোগে ৮ থেকে ১০ জন ভর্তি হয়ে থাকেন। শয্যা সংকটের কারণে অনেকে ফিরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে বলা চলে গত এক সপ্তাহে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল এবং সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে প্রায় ১২০০ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের।

সর্বশেষ খবর