বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভেজাল কীটনাশকে পুড়ল ৬০ বিঘার আলু খেত

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ভেজাল কীটনাশকে পুড়ল ৬০ বিঘার আলু খেত

লালমনিরহাটে ভেজাল কীটনাশকের কারণে ৬০ বিঘা জমির আলু গাছ পুড়ে গেছে। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ও বড়াবাড়ী এই দুই গ্রামের নয়জন কৃষক এমন ক্ষতির শিকার হয়েছেন। তারা ক্ষতি পূরণের আশায় কৃষি বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরেজমিন গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, আলু চাষিরা খেতে বসে বিলাপ করছেন। তারা বলছেন, সব আলু নষ্ট হলো। এখন দেনা মেটাবেন কেমন করে। জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চাষিরা আলুসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষাবাদ করে সংসার চালান। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষ করেন। এ বছরও আলুর চাষ করেছেন তারা। আলুর চাষাবাদে সময়মতো বীজ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। শীতের মাঝামাঝি সময় গাছ পচা রোগ থেকে আলু গাছ রক্ষায় চাষিরা কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের বিক্রয় প্রতিনিধি ও ডিলারদের পরামর্শে মেনকোজেব স্প্রে করেন। কিন্তু কীটনাশক স্প্রে করার দুই দিন পর আলু গাছের পাতা পুড়ে মরে যেতে শুরু করে। ওই কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আবারও একই কোম্পানির অন্য ওষুধ স্প্রে করেন তারা। কিন্তু কোনোভাবেই আলু খেত আর রক্ষা পায়নি। বড়াবাড়ী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জামাল উদ্দিন বলেন, আমি ৭০ শতাংশ জমিতে আলু লাগিয়ে ছিলাম। এতে আমার প্রায় ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের ডিলার কামাল হোসেনের পরামর্শে মেনকোজেব কীটনাশক স্প্রে করার দুই দিন পর গাছের পাতা পুড়ে মরে যেতে শুরু করে। কামাল হোসেনের পরামর্শে তাদের কোম্পানির অন্য কীটনাশক স্প্রে করেছি কিন্তু গাছ বাঁচেনি। পরে বুঝতে পেরেছি, কীটনাশকে ভেজাল ছিল। এমনকি ডিলারও পাত্তা দিচ্ছে না। একই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত আরেক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার ১৩ বিঘা জমির আলু শেষ। কীটনাশকের প্যাকেটে মূল্য লেখা ছিল ১ হাজার ৮০ টাকা। তবে আমরা কিনেছি ৭৫০ টাকা দরে। কম দামে পাওয়ায় আমরা ওই কোম্পানির কীটনাশক ওষুধ কিনেছিলাম। গাছ মরে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছি কীটনাশকে ভেজাল ছিল। কমলাবাড়ী গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেন, মেনকোজেব কীটনাশক স্প্রে করার দুই দিন পর থেকে আমার ১২ বিঘা জমির আলুগাছ মরা শুরু হয়। আমরা ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। কীটনাশকে ভেজাল থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে কোম্পানির ডিলার কামাল হোসেন বলেন, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে এ রকম হয়েছে। কীটনাশক ভেজাল নয়। কৃষকদের অসচেতনতায় এই ক্ষতি হয়েছে। ফেয়ার এগ্রোকেমিক্যালস সার্ভিস লিমিটেডের লালমনিরহাট প্রতিনিধি এনামুল হক বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আলুখেত পরিদর্শন করেছি। আমাদের কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করে এই সমস্যা হয়নি। পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, কৃষকরা মিশ্র কোম্পানির কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করেছেন। আমাদের কোম্পানির কীটনাশক ভেজাল নয়।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষি বিভাগ থেকে আলুখেত পরিদর্শন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর