বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

দাবদাহে ঝরছে আম ফলন নিয়ে শঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

দাবদাহে ঝরছে আম ফলন নিয়ে শঙ্কা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনাবৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহের কারণে বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আম। এতে চলতি মৌসুমে আমের ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, মৌসুমের শুরুতে গাছে আমের মুকুলে চোখ জুড়ালেও যথা সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় গাছে আমের গুটি কিছুটা কম এসেছে। আর বর্তমানে প্রচ- দাবদাহের কারণে বোটা শুকিয়ে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। আবহাওয়ার এমন  বৈচিত্র্য দেখে হতাশ হচ্ছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমিতে ২৮ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৮টি আম গাছ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ১৬৫ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ২০ হাজার ২৬০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৪ হাজার ২৩০ হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ৪ হাজার ২৭১ হেক্টর এবং ভোলাহাট উপজেলায় ৩ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে আম গাছ রয়েছে। সূত্র মতে, জেলায় অন্যান্য আমের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আশ্বিনা আমের আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলাজুড়ে ৯ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আশ্বিনা আমের চাষ করছেন কৃষকরা। তবে জেলার অন্যান্য উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জে সবচেয়ে বেশি জাতের আমচাষ হচ্ছে। এ উপজেলায় প্রায় ১৫ লাখ ১৫ হাজার আম গাছে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হচ্ছে। সূত্রটি আরও জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ফজলি, লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, ক্ষিরশাপাত, ল্যাংড়া, আ¤্রপালি, আশ্বিনা, ভারতীয় জাতের আমের মধ্যে রয়েছে, হাইব্রিড-১০, সুর্বণরেখা, মিশ্র স্পেশাল, ইন্ডিয়ান চোষা, ভারতী, হরদেমনি, রত্না, সরিখাস, মেঘলালণ্ঠন, বিশ্বনাথ চ্যাটার্জি, ভাসতারা, সিন্ধু, চম্পা, সূবর্ণ, নীলউদ্দীন, রাংগোয়াই, অরুনা, আলীপুরী, বেনীসান, নীলাম্বরী, দশরী, কজলা ও মায়ানমারের-মায়ানমার স্পেশাল, মিনথলিন ও থাই কাঁচামিঠা। ফো¬রিডা থেকে ইরউইন, জিল, পলিমার কেইট ও রুবি এবং ফিলিপাইন থেকে কারাবাও এবং পাহুথান আম চাষ করা হচ্ছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের গাছগুলোর নিচে অসংখ্য আমের গুটি ঝরে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া গাছের ডগায় আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। অনাবৃষ্টি আর দাপদাহের কারণে আমের বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। তবে ইতোমধ্যে আমের গুটি ঝরা রোধ করতে চাষিরা সেচ দিতে শুরু করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি সুকুমার প্রমাণিক বলেন, খরার কারণে আমের গুটি অনেক পরিমাণে ঝরে যাচ্ছে। যার কারণে গাছ থেকে আম কমে যাচ্ছে। গাছগুলোতে আমের মুকুল অনেক এসেছিল কিন্তু প্রয়োজন মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক মুকুল রোদে পুড়ে ঝলসে গেছে। তবে এমন আবহাওয়া চলতে থাকলে আমের বাগান নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় থাকতে হবে। অন্য আম চাষি শাহজাহান আলী বলেন, বাগানে আমের গাছগুলোতে ভালোই মুকুল এসেছিল কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অনেক মুকুল রোদের কারণে নষ্ট হয়েছে। তার পরেও যেগুলো মুকুল ফুটে আমের গুটি বের হয়েছিল কিন্তু প্রচ- খরার কারণে সেগুলো থেকেও অনেক আম ঝরে যাচ্ছে। এসব কারণে অধিকাংশ গাছ আমশূন্য হয়ে পড়ছে। বর্তমানে দাপদাহের কারণে আমগাছে সেচ ও কীটনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করেও গুটি ঠেকানো যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কানিজ তাসনোভা জানান, উপসহকারীরা আমের গুটি ঝরা রোধ করতে বাগান মালিক ও চাষিদের আমের গাছে বেশি করে পানি দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন এবং ছত্রাকনাশক ও বোরন স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় আমের গুটি ভালো রয়েছে। কিন্তু দাপদাহ ও বৃষ্টি না হওয়ার করণে আমের গুটি ঝরে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর