হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ। এ জেলার বৃহৎ হাওরগুলোর একটি জামালগঞ্জ উপজেলার পাগনার। ১৬ হাজার হেক্টর আয়তনের হাওরটিতে বোরো আবাদযোগ্য জমি রয়েছে সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর। এসব জমির মালিক হাওরের অন্তত ৫০ গ্রামের কৃষক। নিচু এলাকা হওয়ায় বছরে একটি মাত্র ফসল আবাদ করেন তারা। তবে পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশনের দুটি খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবার মাথায় হাত পড়েছে হাজার হাজার কৃষকের। এখন অন্যান্য হাওরে সবুজ বোরো ধানের সমারোহ। তবে পাগনার হাওরের বেশিরভাগ জমিতে এখনো হাঁটু থেকে কোমর পানি। সময়মতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় অনাবাদি থাকার শঙ্কা রয়েছে সেসব জমি। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন হাওরের প্রান্তিক কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের খাদ্য খাত।
স্থানীয়রা জানান, গজারিয়া ও ঢালিয়া নামে দুটি খাল দিয়ে নিষ্কাশন হয় পাগনার হাওরের পানি। দুটি খালের উৎসমুখে জলকপাট নির্মাণ করে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মাছ ধরার লোভে গেল বর্ষা মৌসুমের শুরুতে গজারিয়া ও ঢালিয়া খালের জলকপাট খুলে দেওয়ায় অধিক মাত্রায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে এর তলদেশ। হেমন্তে বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়ার পর তাৎক্ষণিক খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যে কারণে বিশাল আয়তনের এ হাওরের পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। ফলে অনাবাদি রয়ে যেতে পারে এর অর্ধেকের বেশি জমি। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার পাগনার হাওরের সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৩০ হাজার মণ। যার বাজারমূল্য ১৬৬ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু অর্ধেক জমি অনাবাদি থেকে গেলে প্রায় ৮৩ কোটি টাকার ধান উৎপাদন কম হতে পারে। হাওর পাড়ের ফেনারবাঁক গ্রামের কৃষক জুলফিকার চৌধুরী রানা বলেন, গত বছর গজারিয়া খাল খননের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কাজ না করে সেগুলো লুটপাট করা হয়েছে। এ খাল দুটি দ্রুত খননের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় হাওর পাড়ের ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের কৃষক একেবারে মাঠে মারা যাবে। কৃষক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য চেয়ারম্যান, ইউএনও, এসও থেকে শুরু করে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কেউ গুরুত্ব দেননি। আমার প্রায় ১৫ একর জমি পানির নিচে। এগুলো এবার আর চাষ করা সম্ভব না। আমার মতো অবস্থা হাজার হাজার কৃষকের। গজারিয়া গ্রামের আমির হোসেন বলেন, পানি নিষ্কাশনের দুটি খাল সঠিকভাবে খনন করতে হবে। আগের মতো যেন লুটপাট না হয়। অবশ্য খাল খননের প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, পাগনার হাওরের পানি নিষ্কাশনের দুটি খালসহ ভিতরের খালগুলো খননের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।