উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীবেষ্টিত এ জেলা প্রতি বছরই কমবেশি বন্যার কবলে পড়ে। নদনদীর পানি বাড়া বা কমার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দেয় ভাঙন। এতে প্রতি বছর বিলীন হয় নদনদীর তীরবর্তী এলাকার ফসলি জমি, ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। স্থানীয়রা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে এক মাসের মধ্যে তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে পুঁটিমারী ও চর দরবস্তবাড়ি নামে দুটি গ্রাম। এ ছাড়া নদী তীরবর্তী ফুলমিয়ার বাজার, বাবুর বাজারসহ পাঁচটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভাঙন। শুধু সুন্দরগঞ্জ নয়, যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের জিয়াডাঙ্গা থেকে কটকগাছা এবং গলনারচর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এক বছরে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৬২ হেক্টরের বেশি কৃষিজমি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫৪৭ হেক্টর। এর মধ্যে এক বছরে নদীতে বিলীন হয়েছে ১৬২ দশমিক ৩ হেক্টর জমি। বর্তমানে জেলায় কৃষিজমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৫ হেক্টরে। তবে এখানে ৭৫০ হেক্টর চর জেগে উঠেছে। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছরই নদীতে কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক কৃষকই জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে, প্রভাব পড়বে খাদ্যশস্য উৎপাদনে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘নদীর একদিকে ভাঙে আরেকদিকে চর জেগে ওঠে। তবে যেটা নদীতে বিলীন হচ্ছে, সেই চর জেগে ওঠা অনেক সময়ের ব্যাপার। এতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের। জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়াসহ কয়েকটি নদনদী। বর্ষায় নদনদীতে পানি বাড়া ও কমার সময় দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। এতে বিলীন হয়ে যায় বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ অনেক স্থাপনা। জমি ও ঘর হারিয়ে অনেকেই এখন এলাকাছাড়া। আশ্রয় নিয়েছেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর দিনাজপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। চরাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, চরের প্রতিটি মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে পাঁচ থেকে আটবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এক দশক ধরে সারা বছরই নদীভাঙন চলমান রয়েছে। জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে চরের মানুষের কষ্ট কখনো দূর হবে না।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নদীভাঙনের স্থানগুলোর তীর সংরক্ষণে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার ৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে ২২ কিলোমিটার তীর সংরক্ষণ কাজ। এ কাজে ৮৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে নদী ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ দিয়ে দায়সারা কাজ করা হচ্ছে। নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান তারা।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভাঙনকবলিত স্থানে তীর সংরক্ষণ কাজ চলমান রয়েছে। তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন হলে ভাঙনকবলিত এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।