কক্সবাজার শহরে সুপেয় পানির অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। ১ হাজারের বেশি অগভীর নলকূপ বিকল হয়ে গেছে। অনেক নলকূপ থেকে উঠে আসছে পানের অযোগ্য লবণাক্ত পানি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, কক্সবাজার শহরে প্রায় ৩ হাজার গভীর নলকূপ ও ৩০ হাজার অগভীর নলকূপ দিয়ে দৈনিক ৩ কোটি লিটার পানি তোলা হচ্ছে। শহরের দেড় লাখ বাসিন্দা ছাড়াও প্রায় ১ লাখ পর্যটকের চাহিদা মেটায় এ নলকূপগুলো। নলকূপগুলোতে মে মাসের শেষ দিক থেকে নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত স্বাভাবিক পানি থাকলেও বাকি সময় বিপত্তি ঘটে। এ সময় নলকূপ থেকে উচ্চমাত্রায় লবণাক্ত পানি উঠে আসে অথবা নলকূপ বিকল হয়ে যায়। শহরের সাগরতীরবর্তী এলাকার ১ হাজারের অধিক অগভীর নলকূপ বিকল হয়ে গেছে। কিছু এলাকার গভীর-অগভীর নলকূপগুলো থেকে উঠে আসছে পানের অযোগ্য লবণাক্ত পানি। ফলে তীব্র পানিসংকটে পড়েছেন শহরের বাসিন্দারা।
পৌরসভা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মতে কক্সবাজারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ ফুট হারে নিচে নামছে। ১০ বছর আগেও শহরের টেকপাড়ায় ১২০ থেকে ১৫০ ফুটের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পাওয়া যেত। অথচ এখন পানির স্তর পাওয়া যায় ৩০০ থেকে ৫০০ ফুটের বেশি গভীরে। কয়েক বছরে কক্সবাজার সাগরপারের কলাতলী এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১০ থেকে ১৫ ফুট নিচে নেমেছে। ফলে অকেজো হয়েছে সাগরপারের ৩ শতাধিক আবাসিক হোটেলের অসংখ্য পানির পাম্প।
সূত্র জানান, কক্সবাজারের সুপেয় পানির সংকট দূর করতে ২০২০ সালে শহরে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় দেড় শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজায় এ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে দুই দফা প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালে শোধনাগারের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। আবারও এর মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক জানান, ‘পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। বিদ্যুৎসংযোগ পেতে দেরি হওয়ায় সরবরাহ লাইনের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। বিদ্যুৎসমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। আশা করছি জুনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু করা যাবে। হাউস কানেকশনের ফরম ছাড়া হবে দুই-এক দিনের মধ্যে। ১ হাজার কানেকশন হলেই সরবরাহ শুরু হবে।’
প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির জুনের মধ্যে ঘরে ঘরে পানি পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘প্রথমে হোটেল-মোটেল জোনকে প্রাধান্য দিয়ে পানি সরবরাহ করা হবে। কক্সবাজার পৌরসভার প্রতিটি ঘরে সুপেয় পানি পৌঁছানো হবে।’ অভিযোগ, প্রথমে প্রতিটি ঘরের পানির লাইন পৌরসভার করার কথা থাকলেও শুরু হয়নি বসতবাড়ির সরবরাহ লাইন স্থাপনের কাজও। তবে শিগগিরই লাইনের কাজ শেষ করবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার পানি পরিশোধন করা হবে শোধনাগারে। সেখান থেকে পৌরসভার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে পানি সরবরাহ করা হবে।