বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় বাগেরহাট শহর। বৃষ্টি শেষ হলেও দিনভর থেকে যায় পানি। ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রথম শ্রেণির এই পৌর শহরের ২ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাগেরহাটে এই জলাবদ্ধতা দীর্ঘ বছরের। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ভালো না থাকা, খাল দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থা। কম হোক বা বেশি, বৃষ্টি হলেই শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বাড়িঘর, সড়কসহ পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকের চুলায় আগুনও জ¦ালানো যায় না। বাসাবাড়ি থেকে বের হওয়ার অবস্থা থাকে না। শহরের বাসিন্দাদের পড়তে হয় অকল্পনীয় ভোগান্তিতে। শহরের বাসিন্দা উৎপল দেবনাথ বলেন, বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় রয়েছি। কী করব, বাড়িঘর বেচে তো আর চলে যেতে পারি না। তাই কষ্ট করে থাকছি। সরেজমিনে সম্প্রতি বৃষ্টির পর দেখা যায় শহরের খানজাহান আলী সড়ক, রেল রোড, সাধনার মোড়, শালতলা, পিটিআই সড়ক, ২৫০ জেলা হাসপাতাল সড়ক, আমলাপাড়া সড়ক, জেলা ডাকঘরের সামনে, মডেল থানা, খারদ্বার, বাসাবাটি, মিঠাপুকুরপাড় মোড়, পৌরসভার সামনে, জাহানাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সড়ক, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পিছনসহ শহরের ৭৫ ভাগ এলাকা ডুবে রয়েছে। তলিয়ে গেছে শহরের অলিগলি, সড়ক।
বাগেরহাটের যাত্রার ইউনিয়নের এবাদাদ হোসেন বলেন, জেলা সদরে থানায় ঢুকতে হাঁটুসমান পানি ভাঙতে হয়। শহরের সব সড়কই বৃষ্টির পানিতে ডুবে রয়েছে। থানার পুলিশ সদস্য মো. সাইদ জানান, বৃষ্টি হলে থানার সামনে পানিতে তলিয়ে যায়। পুরো শহরেরই একই অবস্থা হয়। অনেক দোকানপাটও তলিয়ে যায়।
আটোরিকশা চালক সোহেল খান বলেন, শহরের অধিকাংশ সড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকছে। কোথাও হাঁটুসমান পানি, কোথাও আবার গাড়ির চাকা ডুবে থাকছে। মানুষ ঘর থেকেই বের হতে পারছে না। আয় কম হচ্ছে। পানিতে ডুবে থাকায় সড়কে খাদাখন্দে গাড়ি পড়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। গৃহবধূ শাহানা পারভিন বলেন, বাড়ির ভেতরে পানি উঠে গেছে। চুলায় আগুনও জ¦ালানো যাচ্ছে না। ছোট ছেলেটা পানিবাহিত সর্দি জ্বরে ভুগছে। জেলা সচেতন নাগরিক কমিটি সুজনের সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসিব বলেন, শহরের সড়ক, ড্রেন, খাল কোনো কিছুই ঠিক নাই। বাগেরহাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, বাগেরহাট শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যা রয়েছে। এর প্রধান কারণ আধুনিক ডেনেজ ব্যবস্থা না থাকা ও সরকারি খাল দখলসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া শহররক্ষা বাঁধে থাকা পানি নিষ্কাশনের গেটগুলো সংস্কারের অভাবে প্রায় অচল হয়ে রয়েছে। আমরা গেটগুলো সচল করার চেষ্টা করছি। বৃষ্টি মৌসুম গেলে খাল ও ড্রেন পরিষ্কার করা হবে। এটা করতে পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।