পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চাষিদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সার বরাদ্দ আগের অর্থবছরের তুলনায় কম। এতে সার সংকটের আশঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কিছু চাষি সংশ্লিøষ্ট দপ্তরে নতুন করে সার বিভাজনের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছে।
চাষিদের অভিযোগ, প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ২৭, টিএসপি ২৭, ডিএপি ২১ ও এমওপি ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া এ অর্থবছর প্রায় ১,৯১৩ মেট্রিক টন সার কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এই উপজেলায়। চাষিদের লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়ায় ১৪,৯৫০ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। কফি, লিচু, আম, কমলা, মাল্টা, কাঁঠালসহ অন্য ফলের চাষ হচ্ছে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে ধান, গম, পাট, ভুট্টা, মরিচ, আলুসহ নানানরকম ফসল চাষাবাদ হয়। পর্যটন এলাকা হওয়ায় কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, কফি, লংগান, রামবুটানসহ বিদেশি ফল, ফুল, ঔষধি গাছের বাগানও রয়েছে এ উপজেলায়। পঞ্চগড় জেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সারের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয় ইউরিয়া ৪৫,৯৮২, টিএসপি ১৪,৯১৬, ডিএপি ১৭,২৪৫, এমওপি ২২,৫৪৬ মেট্রিক টন। জেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ১ হাজার মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। এর ভিত্তিতে ৫ উপজেলায় সার বিভাজন করা হয়। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তেঁতুলিয়া উপজেলায় ইউরিয়া ৫,৮৮২ মেট্রিক টন, টিএসপি ২,৭১৬ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩,১০০ মেট্রিক টন এবং এমওপি সারের বরাদ্দ ছিল ৩,৪৫০ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ইউরিয়া বরাদ্দ ঠিক থাকলেও গত অর্থবছরের তুলনায় টিএসপি ৭৭১ মেট্রিক টন, ডিএপি ৬৬৭, এমওপি ৪৭৫ মেট্রিক টন কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ অর্থবছরে টিএসপি ১,৯৪৫, ডিএপি ২,৪৩৩, এমওপি ২,৯৭৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, গত অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ এ বছর কম দেওয়ায় সার সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে সার সংকট দেখা দিলে আবাদ ব্যাহত হবে। ফলন কম হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার ভজনপুর এলাকার সার ডিলার রফিকুল ইসলাম জানান, সরকার নির্ধারিত মুল্যেই সার বিক্রি করা হচ্ছে। শিলাইকুঠি বাজারের সার বিক্রেতা নজিবুল হক বলেন, দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস বলেন, চাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদের কারণে সার সংকট দেখা দিতে পারে। এই উপজেলায় আরও সার প্রয়োজন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল মতিন জানান, সার বিভাজনে কোনো সমস্যা নেই। এখন একই চাষি চা বাগান এবং আমন চাষাবাদে সার ব্যবহার করছেন। চা বাগানের জন্য সার বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তাই এই সংকট।
চা বাগানসহ হিসাব করলে অবশ্যই সারের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। মূলত চা বাগানের জন্য সার বরাদ্দ দেওয়ার কথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। আমরা বারবার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য চা বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি।