দেরিতে হলেও পাহাড়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে বিদ্যুৎ শক্তি। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে এই প্রথম স্থাপন করা হচ্ছে পৃথক দুটি ১৩২/৩৩ কেভি শক্তির বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলি নদীর ওপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে দেশের প্রধান জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখের অধিক পরিবারের লোকজন। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৫৪ হাজার একর চাষযোগ্য জমি। কিন্তু স্থানীয় লোকজনকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত বিদ্যুতের সুবিধা পাননি জেলার অধিকাংশ লোকজন।
একটি সূত্র জানায়, রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদারের দাবি ও প্রচেষ্টার ভিত্তিতে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রণালয়সহ বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগে বিদ্যুৎবিহীন থাকা রাঙামাটির বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলাকে ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় ৫ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হচ্ছে বর্তমানে।
এবার এলাকাবাসীর চাহিদা মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সদর উপজেলার বিদ্যুৎবিহীন ছয়টি ইউনিয়ন বন্দুকভাঙ্গা, বালুখালী, মগবান, জীবতলী, কুতুকছড়ি ও সাপছড়ির প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শুকরছড়ি এলাকায় একটি ১৩২/৩৩ কেভি শক্তির বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। এ জন্য স্থানীয় মালিকদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এটি নির্মিত হলে শহরসহ আশেপাশের এলাকায় চাহিদা মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ। সূত্রটির তথ্য মতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরেও আরেকটি একই শক্তির বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
এদিকে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ির শুকরছড়িতে ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে বল জানা গেছে। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণ ও পরিমাপ শেষে ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষকে জমিসহ কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মোট ৫ দশমিক ৩৫ একর জায়গার মালিকদের পক্ষে স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি মনিন্দ্র চাকমার সহায়তায় অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ মূল্য বাবদ ৬ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা স্ব স্ব জমির মালিকদের কাছে পরিশোধ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি।
এ ব্যাপারে মনিন্দ্র চাকমা বলেন, অধিগ্রহণ করা জমির যাবতীয় কাগজপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের সব টাকা মালিকদেরকে পরিশোধ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি। একই সঙ্গে সরকারের কাছে জমি হস্তান্তর করেছেন মালিকরা। তারা হলেন অলিঙ্গ চাকমা, কলিঙ্গ চাকমা, বুজ্যে চাকমা, বিজিমোয়া চাকমা, ভরত কুমার চাকমা, স্নে কুমার চাকমা, নীল মনি চাকমা, দয়ামনি চাকমা ও সোমা চাকমা।
জমির মালিক স্নেহ কুমার চাকমার সঙ্গে সরাসরি কথা হলে তিনি জানান, তার ৩৫ শতক জমির ক্ষতিপূরণের মূল্য বাবদ সব পাওনা বুঝে পেয়েছেন। একই সঙ্গে অন্যরাও সবাই নিজেদের ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ টাকা পেয়েছেন।
জমি অধিগ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তানভীর আহমেদ বলেন, শুকরছড়িতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির জমি অধিগ্রহণ এর মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির প্রকৌশলী ধর্মদর্শি বড়ুয়া বলেন, খুব শিগগিরই এ বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, সারা দেশে মোট দশটি নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। সেগুলোর মধ্যে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় একটি করে দুইটি উপকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এ দুটি বিদ্যুৎ সঞ্চালন উপকেন্দ্র নির্মিত হলে শহরাঞ্চলসহ পার্বত্য এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/ এস আহমেদ