সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আসাদুল হকের কর্মী-সমর্থক ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলা ও অত্যাচারে কারনে বাড়ি থেকে বের হতে পাচ্ছেন না দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমাদুল ইসলাম। ভয়ে নিজ বাড়িতেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কয়েক দফায় হামলার শিকারও হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছের তার প্রচার মাইক ও নির্বাচনী অফিস। তার আভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর কর্ম-সমর্থকরা সসস্ত্র মহড়া দেওয়ার কারণে তিনি বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নের টিকেট ও টিকেট সাইক্লোন সেন্টার এলাকা এবং বহেরাসহ মোট তিনটি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। রাতে পুষ্ককাটি নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে পুলিশের নিষ্কৃততার কারণে অতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা। যে কারণে তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ইউনিয়নের কোথাও গণসংযোগে যেতে পারছেন তিনি। এই সুযোগে কুলিয়ার সমস্ত এলাকা থেকে আনারস প্রতীকের পোস্টার নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকার দলীয় প্রার্থী চেয়ারম্যান আসাদুল হক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী না থাকায় মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশিষ্ট শিল্পপতি ইমাদুল ইসলামের সাথে জোর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুল ইকের। যে কারণে বিজয় ছিনিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে আসাদুল হক। প্রথম ধাপের এ নির্বাচানে কুলিয়া ইউনিয়নে গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৫টি হামলার ঘটনা ঘটেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর। গত ১৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে টিকেট সাইক্লোন এলাকায় হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাদুল ইসলামের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করা হয়। এ সময় আহত হন আনারস প্রতীকের সমর্থক অনীল সরকার, সুনিল সরকার,বাদল ও মনিরুলসহ বেশ কয়েকজন। এ ঘটনায় তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে দেবহাটা থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তহমিনা আক্তার ঘটনা স্থলে এসে চেয়ারম্যান আসাদুল হকের ছেলে আব্দুর রেজা বাবু, মজিদ শেখ, মোস্তফা, দেব ও তপন মন্ডলসহ মোট ৫ জনের প্রত্যেকে পাঁচ হাজার করে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমান অনাদায়ে ৭ দিনের জেল প্রদান করেন। কিন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যান আসাদুল হক ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তার ওই সন্ত্রাসী বাহিনীকে মুক্ত করেন। এ ঘটনার জের ধরে ওই রাতেই পুস্পকাটিতে আবারও হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অপর একটি নির্বাচনী অফিস ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার পরের দিন সকাল ১১টার দিকে ১৫ মার্চ বিদ্রোহী প্রার্থী ইমাদুল তার কর্মীদের নিয়ে পুষ্পকাটিতে যাচ্ছিল। এসময় আশু মার্কেট এলাকা থেকে আসাদুল হকের ছেলে শরীফের নেতৃত্বে তার উপর হামলা চালায়। এতে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে কোন রকমে প্রাণে রক্ষা পান স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাদুল। ভাংচুর করা হয় ৫-৬টি মটর সাইকেল। এঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে আসাদুল হকের ছেলে শরীফ রেজা ও আব্দুর রেজা বাবুসহ উভয় গ্রুপের ১০ জন আহত হয়। এতে রক্তাক্ত অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাদুলের ড্রাইভার সোহেল, কর্মী মেম্বর মোশারফ হোসেন, আক্তারুল ইসলাম, মুকুলকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে তাদেরকে সরকার দলীয় প্রার্থীর লোকজন বের করে দেয়।
টিকেট এলাকার অনিল সরকার, ভ্যান চালক রোকনসহ একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসাদুল হকের অত্যাচার ও সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়-ভীতি দেখানোর কারণে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন নির্বাচনে কুলিয়াতে প্রার্থী দিতে পারেনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাদুল ইসলাম জানান, আসাদুল হক এক জন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে দেবহাটা, আশাশুনি, সাতক্ষীরা সদর ও ঢাকার খিলগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে এলাকাতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম শুরু করেছে আসাদুল হক। আনারস প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সাধারণ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকা থেকে তার আনারস প্রতীকের পোস্টার ছিড়ে ফেলানো হয়েছে। বাড়ির সামনে তার ছেলে বাবু ও ছেলের পুত্র অস্ত্র নিয়ে মহাড়া দিচ্ছে। এক প্রকার পাহারা বসানো হয়েছে। ফলে বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে আছি। আর এখন ভোট কেন্দ্রে যাতে কোন পোলিং এজেন্ট না দিতে পারি তার জন্য এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে লোকজনকে শাসানো হচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আসাদুল হক। তিনি জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাদুলের লোকজন আশু মার্কেট এলাকায় আমার ছেলে শরীফ রেজা ও আব্দুর রেজা বাবুসহ পাঁচ কর্মীর উপর হামলা করে। সেই মূলত সন্ত্রাসী। থানা পুলিশকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে প্রতিনিয়ত আমার কর্মী সর্মথকদের উপর হামলা করছে। থানায় মামলা দিতে গেলে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। নির্বাচনে ফেল করানোর জন্য প্রশাসনের সাথে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে।
দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৫ মার্চ দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৭ মার্চ, ২০১৬/মাহবুব